সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ই পৌষ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল dailyvobnews@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • দেশকে কোনও দলের কাছে ইজারা দেয়া হয়নি
  • সাগরে নিম্নচাপ, দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি শুরু
  • ড. ইউনূস আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দেবেন আজ
  • ২৬ শতাংশ রেমিট্যান্স বেড়েছে হাসিনার পতনের পর
  • পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা প্রশ্নে রায় ঘোষণা চলছে
  • ৬ কমিশনের প্রধানদের নিয়ে হবে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’
  • নৌবাহিনীর ৩২ কর্মকর্তা পেলেন অনারারী কমিশন
  • ১০ এসি বাস নিয়ে চালু হলো বিআরটি প্রকল্প
  • একাত্তরের পুনরাবৃত্তি আমরা জুলাইয়ে দেখেছি
  • বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জনতার ঢল, ফুলেল শ্রদ্ধায় শহীদদের স্মরণ

প্রাথমিকের ভিত তৈরিতে চারুকলা শিক্ষার গুরুত্ব  

অন্‌জন দাশ

প্রকাশিত:
২৬ আগষ্ট ২০২৩, ১৫:৪৭

কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ, পাকলে করে ঠাস ঠাস। বাঁশকে যেমন কাঁচা অবস্থাতেই বাঁকানো যায় তেমনি পেকে গেলে শক্ত বাঁশকে সহজে বাঁকানো যায়না। শিশুরাও অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং নরম মনের। রাষ্ট্রের দক্ষ জনসম্পদ গঠন, জাতীয় উন্নয়ন, প্রগতিশীল ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের মূলভিত্তি হলো প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষা একটি শিশুর জীবনে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ও আজীবন শিখনের ভিত্তি তৈরি এবং আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রথম সোপান ও প্রস্তুতি হিসেবে কাজ করে। প্রাথমিক শিক্ষার মূল কাজ হলো শিশুর সহজাত সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে জ্ঞানভিত্তিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শারীরিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা। আর এই শিক্ষা গ্রহণে শিশু যদি আনন্দ না পায়, তাহলে প্রাথমিক শিক্ষার যে মূল উদ্দেশ্য তা ব্যাহত হবে। শিশুদের মেধা ও মননের বিকাশের লক্ষ্যে মৌলিক পাঠদানের পাশাপাশি সহপাঠক্রমিক কার্যক্রম যেমন- চারুকলা, কারুকলা, সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি, বই পড়া, লেখালেখি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চর্চার সুযোগ করে দেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
 
শিশুর মানসিক বিকাশে এই সহপাঠক্রমিক কার্যক্রমের মধ্যে ছবি আঁকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শৈশবে যদি ছবি আঁকার সুযোগ পায়, তাহলে শিশুরা ধীশক্তিমান ও মেধাবী হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিল্পচর্চার মাধ্যমে শিশুদের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শিশুর মেধা বিকাশে রঙের গুরুত্ব অপরিসীম। শিশু যখন বিভিন্ন রঙ এবং ফর্ম দিয়ে শিল্পচর্চার সুযোগ পায়, তখন তার সৃজনশীলতাও বৃদ্ধি পায়। সে অসাধারণভাবে ভাবতে ও চিন্তা করতে শেখে, যা তাকে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে শেখায় এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে সে তখন সহজেই সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। শিশুরা শুদ্ধ, সুন্দর, ও নির্মল স্বপ্নের আলোকিত আগামী। তাই উপযুক্ত পরিবেশে শিশুর বেড়ে ওঠা প্রয়োজন যেখানে শিশু নিজেকে নিজের মতো করে তৈরি করার সুযোগ পায়। প্রতিটি শিশুই সম্ভাবনাময় এবং তাদের মনের সীমানা আকাশ। তাই শিশুর শেখার ধরণ বুঝে তার ধারণক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষা দিতে হবে। তাহলে সে শিশু একদিন কালজয়ী মানুষে পরিণত হতে পারবে।
 
শিশুর সামর্থ্য ও শক্তিগুলোর স্বাভাবিক ও সুষম বিকাশই হলো শিক্ষার লক্ষ্য। আর শিশুর যথাযথ বিকাশ নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজন আনন্দময় পরিবেশ। এ ধরণের আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টির জন্য নান্দনিক শিক্ষার সুযোগ করে দিতে হবে। তাদেরকে খেলতে খেলতে, ছবি আঁকতে আঁকতে এবং গাইতে গাইতে শিখার সুযোগ করে দিতে হবে।
 
এধরণের সহশিক্ষাক্রমিক কার্যাবলীর মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে অন্যান্য বিষয় পড়ানোর সময় তাদের অংশগ্রহণ সক্রিয়, প্রাণবন্ত ও স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে উঠে এবং খুব সহজেই যেকোন বিষয় খুব দ্রুত বাচ্চাদের বুঝানো যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুর মানসিক বিকাশে খেলাধুলা, সঙ্গীত, বই পড়া বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং এগুলো খুব সহজ এবং সুন্দর পন্থা। তবে, চিত্রাঙ্কন বা ছবি আঁকা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে শিশুর মনে।
 
শিশুদের গতানুগতিক পড়ালেখার পাশাপাশি সহপাঠক্রমিক কার্যক্রমের উপর গুরুত্ব দেয়া প্রত্যেক মা-বাবার উচিত। প্রকৃতপক্ষে, শিশু সবার আগে শিখে তার পিতা মাতা কিংবা পরিবার থেকেই। তাই সবার আগে পিতা মাতা কিংবা অভিভাবকদেরই শিশুর শারীরিক এবং মানসিক পরিচর্যা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে পরিষ্কার ভাবে। অনেককে দেখা যায় তাঁর লক্ষ্য পূরণে শিশুর রুচি, প্রকৃতি, পছন্দ, ইচ্ছা এবং সামর্থ্যের বাইরে বোঝা চাপিয়ে দেন। আসলে আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সন্তানকে সৎ, আদর্শবান , ভালো মানুষ বানানো ।
 
তবে একটা আশার বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে বেশিরভাগ অভিভাবকদের মধ্যে বাচ্চাদের ছবি আঁকা শেখানোর বেশ আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে জেলা, উপজেলা শহরগুলোতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বেশকিছু প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে/স্কুলে সংগীত, নৃত্য, কবিতা আবৃত্তি, ছবি আঁকা শেখানোর ব্যবস্থা রয়েছে। আর মা বাবারাও বাচ্চাদের সেসব আর্ট স্কুলে ভর্তি করিয়ে তাদের ছবি আঁকা কিম্বা অন্যান্য বিষয়গুলো শেখানোর ব্যবস্থা করেন। ছবি আঁকার স্কুলে ভর্তি করানোর উদ্দেশ্য কিন্তু শিশুকে লিওনার্দো-দা- ভিঞ্চি কিংবা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন বানানো না। প্রত্যেক শিশু্র মানসিক বিকাশের জন্যই ছবি আঁকা শেখানো উচিত।
 
প্রকৃতির রূপ, রঙ ও রস প্রতিটি মানুষকেই টানে। তেমনটি টানে শিশুদেরকেও। প্রকৃতির মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন আকার, আকৃতি, ফর্ম  ও রং শিশুকে আকর্ষণ করে অনেক বেশি। যেমনটা আগেই বলেছি, তারা নতুন কিছু খুঁজতে পছন্দ করে। এক্ষেত্রে নানান আকার, আকৃতি ও রঙের মিশেল তাদেরকে আনন্দ দেয়। তাই দেখবেন, পড়ার বইয়ের চেয়ে বিভিন্ন রঙ-বেরঙের কার্টুন, মাছ, লতাপাতা, পশুপাখি, বারবি ডল, টম এন্ড জেরি কার্টুন, মিকিমাউস চরিত্রের ডিজাইনের নতুন ও রঙিন ব্যাগ, খাতা আর রঙ পেন্সিলবক্স, বিভিন্ন আকৃতির স্কেল, রাবার ইত্যাদির প্রতি শিশুদের আগ্রহ থাকে বেশী। এটি শিশুর কোমল মনে স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ তৈরি করে।  এরকম নানান আকার, আকৃতি ও রঙ্গিন শিক্ষা উপকরণ শিশুর মনে যেমন আনন্দ, উদ্দীপনা সৃষ্টি করে তেমনি তার মানসিক বিকাশেও সাহায্য করে।  
 
আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিশুর প্রতিভা বিকশিত করার ব্যাপারে শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষার্থীর মন অত্যন্ত সংবেদনশীল, কোমল, ভীতিপ্রদ এবং সৃজনশীল। একজন আদর্শ শিক্ষকের কাজ শিশুর মনের সব ভীতি দূর করে সৃজনশীল কাজে তাকে সহায়তা করা। গতানুগতিক শিক্ষার বাইরে বৈচিত্র্যময় শিক্ষার ধারা প্রবর্তন করতে হবে। গতানুগতিক শিক্ষাদানের বাইরে গিয়ে ছবি এঁকে, গান শুনিয়ে, গল্প বলে শিশুদের পাঠে আগ্রহী করে তুলতে হবে। সেজন্য সেসব বিষয়েও তাকে পারদর্শী হতে হবে।
 
প্রত্যেক শিক্ষককে গান করা, গল্প বলার পাশাপাশি অবশ্যই চারুকলা বিষয়ে দক্ষ হতে হবে, যে মৌলিক বিষয়গুলো তিনি শেখান সেসব বিষয় পদ্ধতিগতভাবে, সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে এবং প্রতিটি বিষয়বস্তুকে চক, মার্কার পেন, পেন্সিল বা ব্রাশ দিয়ে চিত্রিত করার প্রক্রিয়াটিও তাকে স্পষ্টভাবে রপ্ত করতে হবে।
 
আরও স্পষ্ট করে বলা যায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপকরণ তৈরি, শিশুদের পাঠ–বিষয়ক আলাদা আনন্দ দিতে চারু ও কারুকলা বিষয়ে প্রত্যেক শিক্ষকের জ্ঞান থাকা আবশ্যক। কারণ কথায় আছে একটি ছবি ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে এক হাজার শব্দের চেয়েও বেশী শক্তিশালী। শিশুদের বিভিন্ন ফর্ম, চিত্র কিংবা রঙের প্রতি দুর্বলতা বেশি। আর ফর্ম, আকার, আকৃতি ও চিত্রের মাধ্যমে রঙের খেলা খেলতে খেলতে কঠিন বিষয়গুলোও সহজ করে দেওয়া যায়।
 
সে কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে অন্যান্য বিষয়ের মতো চারুকলা বিষয়ে পারদর্শী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। আর সেটা না হলে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে কমপক্ষে একবছর মেয়াদী দেশের প্রখ্যাত শিল্পীদের মাধ্যমে ‘চারুকলা ও কারুকলা’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার, যাতে তাঁরা শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে যেকোন বিষয় মুখে ব্যাখ্যা করার সাথে সাথে এঁকে বোঝাতে পারেন কারণ প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোতে চারুকলা বিষয়ে প্রত্যেক শিক্ষক প্রশিক্ষনার্থীদের যে বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তা  অপ্রতুল এবং অপর্যাপ্ত। তাই এবিষয়ে ভেবে দেখার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।  
 
বিশেষভাবে উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা কার্ডে ‘বিশেষ শিশু’দের আঁকা ছবির ব্যবহার নতুন কিছু নয়। ২০০৯ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১০ সাল থেকেই ঈদ-উল-ফিতর, ঈদ-উল-আজহা, বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষ, ঈদ, এবং জাতীয় দিবসসহ বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ডে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের আঁকা ছবি ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও পাবনার ঈশ্বরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির (জন্মের পর থেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থ) ছাত্রী অরণীর আঁকা ছবি বাংলা নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ডে মুদ্রিত হয়েছে। প্রতিটা উৎসবের আগে জেলা, উপজেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে ছবি বাছাই করে তার শর্টতালিকা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হলে তিনি নিজে দেখে চূড়ান্তভাবে বাছাই করেন। এবং বাছাইকৃত ছবির শিল্পীদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রত্যেকের জন্য এক লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হয় এবং বিশেষক্ষেত্রে তাদের চিকিৎসারও ব্যবস্থা করা হয়।  
 
‘এখন পর্যন্ত যত ছবি নির্বাচিত হয়েছে, সেগুলো দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন বলেও জানা যায়। আমরা নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যবান। শিল্পবোদ্ধা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিশু আঁকিয়েদের অত্যন্ত ভালোবাসেন এবং যোগ্য সম্মান দিতে জানেন।
 
একবার এক চিত্রপ্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন চিত্রকলা শিশুর মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সৃজনশীল মানুষ গড়তে হলে শিশুর মনের দরজা-জানালা একেবারে ছোটবেলা থেকে খুলে দিতে হয়। এজন্য চিত্রকলার চর্চা হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তিনি বলেন, চিত্রশিল্পের মাধ্যমে শিল্পীরা সত্য ও সুন্দরকে তুলে ধরেন। মানুষের মনে কৌতূহল জাগ্রত করেন।
 
যে দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী চারুকলার এমন সমঝদার সেদেশে এই বিষয়ে শিক্ষা প্রদানের প্রাতিষ্ঠানিক বৈশিষ্ট্য অনেক বেশি শক্তিশালী হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু না, এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে, শিক্ষা প্রদানের যে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ চারুকলার ক্ষেত্রে তা এখনো নগণ্য।
 
দেখা যাক, শিশুবয়স থেকেই ছবি আকা কেন গুরুত্বপূর্ণ? শিল্পতৃষ্ণা মানুষের মধ্যে সুদূর আদিকাল থেকেই। এই গুণ মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। এই সহজাত গুণকে যদি একাডেমিক পদ্ধতিতে কাজে লাগানো যায় তাহলে শিশুর দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক, নৈতিক, মানবিক ও নান্দনিক বিকাশ ঘটানো যাবে। এবং তাদেরকে দেশাত্মবোধ, বিজ্ঞানসম্মত সৃজনশীলতা ও উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করা যাবে। এছাড়াও শিশুদের ছবি আঁকা শেখালে আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে যেমন-  (০১) ছবি আঁকলে শিশুর পরিমিতিবোধ বাড়ে, (০২) পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার বিকাশ লাভ হয়, (০৩) সৌন্দর্য জ্ঞান বৃদ্ধি পায়, (০৪) চক্ষু, মস্তিস্ক ও হস্তের পেশীসমূহ নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় সাধন হয়, (০৫) মনোযোগ বৃদ্ধি পায়, (০৬) নির্মল আনন্দ উপভোগ হয় (০৭) স্মৃতি ও কল্পনা শক্তির বিকাশ সাধন হয় (০৮) রুচিবোধের বিকাশ মূল্যায়ণের মাপকাঠি সম্পর্কে ধারণা হয় (০৯) ধৈর্য শক্তির বিকাশ ঘটে (১০) অর্থোপার্জনে সহায়তা করে (১১) শিখন শেখন কাজে সহায়তা দান করে (১২) মনোযোগ ও একাগ্রতা বৃদ্ধি করে, (১৩) মানসিক তৃপ্তি ঘটায় (১৪) অনুপাত ও সৌন্দর্য জ্ঞান বৃদ্ধি পায় (১৫) একাকিত্ব ভুলে যায় (১৬) প্রাণচাঞ্চল্য বাড়ে (১৭) সমস্যাগুলি সমাধান করার ক্ষমতা বাড়ে (১৮) ব্যবহারিক কাজ সম্পাদন করা যায় (১৯) আগ্রহ এবং শেখার প্রেরণার বিকাশ সাধিত হয় (২০) ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ বাড়ে (২১) নির্ভুলতা, সহনশীলতা, দক্ষতার মতো চরিত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি সুসংগঠিত হয়।  
 
গুণগত শিক্ষার পূর্বশর্ত হচ্ছে শ্রেণি কার্যক্রমকে বাস্তবমুখী করে শিক্ষার্থীর আনন্দময় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং তাদের বুদ্ধিভিত্তিক জ্ঞান, মানবীয় গুণাবলীর বিকাশ এবং প্রায়োগিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা। বিশ্বায়নের যুগে টিকে থাকতে বিশ্বমানের নাগরিক হিসেবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হলে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই শিশুদের শিল্প সংস্কৃতির চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। সমাজকে কুসংস্কার, গোঁড়ামি, কূপমণ্ডুকতা, পশ্চাদপদতার অন্ধকার গহ্বর থেকে মুক্ত করে, আজকের শিশুদের চিন্তা-চেতনাকে প্রগতির পথে পরিচালিত করতে হবে। এবং মানবিক-মূল্যবোধসম্পন্ন উন্নত মানসকাঠামো বিনির্মাণ করতে হবে। এবিষয়ে মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি ও স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় চারুকলা শিক্ষার প্রসারে কাজ করতে হবে। চারুকলা শিক্ষার প্রসারে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। এবিষয়ে রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা ও নীতি নির্ধারণীও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জেলা, উপজেলা  পর্যায়ে প্রশাসনের উদ্যোগে “আর্টস্কুল” প্রতিষ্ঠা, সভা সেমিনার ও বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করতে হবে।  আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে প্রগতিশীল, মননশীল ও আধুনিক স্মার্ট মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সবশেষে বলতে চাই, গতানুগতিক শিক্ষার পাশাপাশি চারুকলা শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরিশীলিত বোধ ও চিন্তা শক্তির উন্নয়নই হতে পারে মানুষের কল্যাণ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের উপায়।
 
লেখক: অন্‌জন দাশ
উপজেলা নির্বাহী অফিসার
রায়পুর (লক্ষ্মীপুর)

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর