বৃহঃস্পতিবার, ২৬শে ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ই পৌষ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল dailyvobnews@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • আন্দোলনে নামলেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা
  • বায়ুদূষণে আজ তৃতীয় ঢাকা, বেশি দূষণ যেসব এলাকায়
  • পান্থকুঞ্জ ও আনোয়ারা পার্ক নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে
  • দেশকে কোনও দলের কাছে ইজারা দেয়া হয়নি
  • সাগরে নিম্নচাপ, দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি শুরু
  • ড. ইউনূস আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দেবেন আজ
  • ২৬ শতাংশ রেমিট্যান্স বেড়েছে হাসিনার পতনের পর
  • পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা প্রশ্নে রায় ঘোষণা চলছে
  • ৬ কমিশনের প্রধানদের নিয়ে হবে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’
  • নৌবাহিনীর ৩২ কর্মকর্তা পেলেন অনারারী কমিশন

বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারীরা চিহ্নিত হলেও বিচারে হয়নি কমিশন

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত:
১৪ আগষ্ট ২০২৩, ২১:২৭

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান


জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র ও এ ঘটনার পেছনে কারা জড়িত ছিল তা খুঁজে বের করতে একটি তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি দীর্ঘদিনের। কয়েক বছর আগে এই কমিশন গঠনে সরকারের সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগের কথা জানা গেলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়নি।


স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করা হয়। বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর পরই ইডেমিনিটি অধ্যাদেশ জারি করে এবং জাতীয় সংসদে আইন পাস করার মাধ্যমে বিচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আইন সংশোধনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রম শুরু করে।

হত্যাকাণ্ডে যারা সরাসরি অংশ নিয়েছিল দেরিতে হলেও তাদের বিচার হয় এবং কয়েক জনের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। গত ২০১০ সালে কয়েকজন খুনির ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর এই হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র ও এর পেছনে জড়িতদের চিহ্নিত করার দাবি জোরালো হয়ে ওঠে।

তবে এর আগে থেকেই হত্যার ষড়যন্ত্র ও পেছনে কারা জড়িত ছিল তা খুঁজে বের করে জাতির সামনে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচিত করার দাবি চলে আসে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন দিক থেকে। জাতীয় সংসদেও বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় অনেকেই কথা বলেছেন এবং কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে ২০২০ সালে সরকারের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র ও জড়িতদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিশন গঠনের উদ্যোগের কথা জানান আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।

দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠী, এদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী শক্তিও রয়েছে যারা যোগসাজশে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল বলে অভিযোগ আছে। আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো দীর্ঘ দিন ধরেই এসব অভিযোগ করে আসছে।

আওয়ামী লীগসহ ওই সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের মতে, বঙ্গবন্ধু হত্যার যে বিচার হয়েছে সেটা মূলত তার আত্মস্বীকৃত খুনিদের। এই বর্বরোচিত ঘটনার পেছনে কারা ছিল, সাহস যুগিয়েছে ও কারা ষড়যন্ত্র করেছিল তার তদন্ত এবং বিচার এখনো করা হয়নি। সামরিক বাহিনীর কিছু অফিসার ও সৈনিক যারা সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল শুধু মাত্র তাদের পরিকল্পনায় এতো বড় ন্যক্কারজনক ও দুঃসাহসিক হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করা সম্ভব হয়নি। এর পেছনে অনেক বড় ধরণের দেশিয় ও আন্তর্জাতিক চক্রের ষড়যন্ত্র কাজ করেছে।

খুনিরা যেভাবে হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত করেছে তার সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে পেছন থেকে বড় কোনো শক্তি কাজ না করলে এটা তাদের একার পক্ষে সম্ভব ছিল না। এ হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই এই অভিযোগ জোরালোভাবে উঠেছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এবং ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা জড়িত ছিল, কি ষড়যন্ত্র ছিল, কারা সেই ষড়যন্ত্র করেছিল এটা বের হওয়া জরুরি। আমি তদন্তের দাবি জানিয়েছি অনেক আগেই। ১৪ দলের পক্ষ থেকেও দাবি জানানো হয়েছে। জাতি জানতে চায় কারা জড়িত ছিল, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটা করা উচিত।

এদিকে বিভিন্ন দিক থেকে দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের আগস্টে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র ও এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে কমিশন গঠনে সরকারের সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগের কথা জানান। তিনি তখন বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের ষড়যন্ত্র উদঘাটনে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যারা সরাসরি জড়িত ছিল তাদের বিচার হয়েছে। এর পেছনের যে রাজনীতি ও ষড়যন্ত্র ছিল সে ব্যাপারে তদন্ত হয়নি। করোনা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে আমরা কার্যক্রম শুরু করব।

ওই বছর ২৫ আগস্ট পক্ষ থেকে আইনমন্ত্রীর কাছে এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, সরকার কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে গঠনের কাজ শুরু হবে।

পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বরে এ কমিশন গঠনের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আরও একটু কমলে আমরা কমিশন গঠনের কাজ শুরু করবো। করোনা কিছুটা কমেছে, সব কিছু খুলে দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হবে। কীভাবে কমিশন গঠন করা হবে, এর কার্যপরিধি এবং ক্ষমতা কী হবে, টার্মস অব রেফারেন্স কি হবে- এসব বিষয় বিশেষজ্ঞদের সাথেও আমরা শিগগির আলোচনা করে সবকিছু ঠিক করব।

আইনমন্ত্রী গত তিন বছর আগে সরকারের এই সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগের কথা জানালেও এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কমিশন দৃশ্যমান হয়নি। পাশাপাশি এই কমিশন গঠনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কেও আর কিছু জানা যায়নি। বিষয়টি সম্পর্কে সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, সরকারের সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা আছে। তবে কমিশন গঠন কার্যক্রম এখনও এগোয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আমি কয়েক বার এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা জড়িত ছিল তা বের করার জন্য তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছি। আমাদের দলের অন্য অনেকেই দাবি করেছেন। এই কমিশন গঠন করবে আইন মন্ত্রণালয়। আমি যতটুকু জানি এখনও কোনো কমিশন গঠন হয়নি। কিন্তু কেন করা হচ্ছে না সেটা তো আমি বলতে পরবো না। এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী ভালো বলতে পারবেন।

এদিকে এই কমিশন গঠনের অগ্রগতির বিষয়ে বা গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর