বুধবার, ২৫শে ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ই পৌষ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল dailyvobnews@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • আন্দোলনে নামলেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা
  • বায়ুদূষণে আজ তৃতীয় ঢাকা, বেশি দূষণ যেসব এলাকায়
  • পান্থকুঞ্জ ও আনোয়ারা পার্ক নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে
  • দেশকে কোনও দলের কাছে ইজারা দেয়া হয়নি
  • সাগরে নিম্নচাপ, দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি শুরু
  • ড. ইউনূস আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দেবেন আজ
  • ২৬ শতাংশ রেমিট্যান্স বেড়েছে হাসিনার পতনের পর
  • পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা প্রশ্নে রায় ঘোষণা চলছে
  • ৬ কমিশনের প্রধানদের নিয়ে হবে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’
  • নৌবাহিনীর ৩২ কর্মকর্তা পেলেন অনারারী কমিশন

মেডিকেল ডিভাইস বিক্রিতে স্বচ্ছতা আনা দরকার: ভোক্তা ডিজি

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত:
৭ আগষ্ট ২০২৩, ১৩:২৭

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান

মেডিকেল ডিভাইস চাল, ডাল, লবণের মতো পণ্য নয় মন্তব্য করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, এটি একটি জীবন রক্ষাকারী পণ্য। এখানে আরও স্বচ্ছতা আনা দরকার।

রোববার (৬ আগস্ট) হার্টের পেসমেকার ও ভাল্বসহ অন্যান্য ইকুইপমেন্ট সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী ন্যায্য মূল্যে বিক্রয়ের লক্ষে মেডিকেল ডিভাইস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সদস্যদের সঙ্গে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তবে তিনি এসব কথা বলেন। 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

সেমিনারে ভোক্তা অধিদপ্তরের ডিজি আরও বলেন, হৃদরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত মেডিকেল ইকুইপমেন্টের দাম ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের থেকে ঠিক করে দেওয়া হয়। আমরা যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের থেকে এসব পণ্য আমদানির তথ্য নিলাম তখন দেখতে পেলাম, ৩০ ডলার থেকে শুরু করে সাত হাজার ডলারের ইকুইপমেন্ট রয়েছে। এক্ষেত্রে ৩০ ডলারে কোনো ডিভাইস ইমপোর্ট করে ৩ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে কিনা সেটি দেখা দরকার।

তিনি বলেন, এ সেক্টরটি (মেডিকেল ডিভাইস বিক্রি) নিয়ে আমাদের খুব বেশি কাজ করা হয়নি। এখানে ভোক্তার স্বার্থ ও জনস্বাস্থ্য জড়িত। তাই বিষয়টি নিয়ে আজকে আমরা সেমিনারের আয়োজন করেছি। এসব ডিভাইসের আমদানি মূল্য কত ও কত টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে, সেটি জানা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, এসব মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ভারত যেসব দেশ থেকে আমদানি করে আমরাও একই জায়গা থেকে আমদানি করি। কিন্তু ভারতের তুলনায় আমাদের দেশের এসব ডিভাইসের দাম দুই-তিন গুণ বেশি। দামের এ ফারাক কেন সেটি দেখা দরকার।

এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান বলেন, হার্টের পেসমেকার, ভাল্ব, রিংসহ বিভিন্ন মেডিকেল ডিভাইসের দাম বেশি রাখা হচ্ছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা ১৫ দিন আগে একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানে আমরা ওই প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু ব্যত্যয় পেলাম। সে ব্যত্যয়গুলোর মধ্যে ওই প্রতিষ্ঠান ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নির্ধারিত মূল্যের থেকে একটি ডিভাইসে ৭০ হাজার টাকা বেশি দাম রাখা হয়েছে। পাশাপাশি অনেকগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ ডিভাইস মেয়াদ আছে এমন ডিভাইসের সঙ্গে রাখা আছে। এছাড়া বিক্রির ভাউচারে কার্বন কপি ব্যবহার করা হয়নি। ফলে কত টাকায় ডিভাইসগুলো বিক্রি করা হচ্ছে, সেটি আমরা পাইনি। প্যাকেটের গায়ে বিক্রি মূল্যও ছিল না। এজন্য সে প্রতিষ্ঠানকে দুটি ধারায় অভিযুক্ত করে জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিকে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

এ সময় তিনি মেডিকেল ডিভাইসের ক্রয়-বিক্রিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসনের তদাররিক অভাব রয়েছে উল্লেখ করে তাদের তদারকি কার্যক্রম বাড়ানোর আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি মেডিকেল ডিভাইসের দাম পর্যবেক্ষণের জন্য সোমবার (৭ আগস্ট) একটি কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান। যেখানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, মেডিকেল ডিভাইস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি থাকবে। আগামী এক মাসের মধ্যে এ কমিটি ব্যাপারটি পর্যবেক্ষণ করে রিপোর্ট দেবে। সে রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান ভোক্তার ডিজি।

অভিযানের বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৩ জুলাই আমরা কারওয়ান বাজারে অবস্থিত দ্য স্পন্দন লিমিটেডে অভিযানে পরিচালনা করি। এ সময় দেখা যায়, তারা ক্যাশ মেমোতে কার্বন কপি ব্যবহার করেন না। এতে তারা হার্টের পেসমেকার ও ভাল্ব কত টাকায় বিক্রি করছে সেটি আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। এরপর আমরা দেখলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা দামের একটি পেসমেকার তারা বিক্রি করেছে ৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। প্রতিটি পণ্যের গায়ে মূল্য লেখা থাকতে হবে। কিন্তু তাদের কাছে পাওয়া কোনো পণ্যের গায়ে মূল্য লেখা ছিল না। এক বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে এমন ভাল্ব পাওয়া গেছে অনেকগুলো। এসব মেডিকেল ডিভাইস রাখা ফ্রিজের মধ্যে শিমুল গাছের মূল, লেবুসহ অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীও রাখা হয়েছিল। এসব কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা করা হয়েছে এবং জনস্বার্থে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানটির সব কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ অভিযোগের বিষয়ে দ্য স্পন্দন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অংশুমান মালাকার বলেন, আমরা মেয়াদোত্তীর্ণ ভাল্বগুলোকে একই স্টোরে আলাদ করে রেখেছিলাম। কিন্তু আমরা সেটিকে বিক্রির জন্য নয়, সেটি মার্ক করে রাখিনি। এটি আমাদের ভুল হয়েছে। এগুলো আমরা বিক্রির উদ্দেশে রাখিনি। আমরা কখনোই এটি করি না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ডিভাইসগুলো বিক্রির পর হসপিটাল থেকে সাতদিন, ১৫ দিন পরে পেমেন্ট করা হয়। এজন্য বিলগুলোও কার্বন কপি ব্যবহার করা হয়নি।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মেডিকেল ডিভাইস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গাজী এ কে শাহীন বলেন, ২০১৭ সাল থেকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর মেডিকেল ডিভাইসের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এর থেকে বেশি দামে মেডিকেল ডিভাইস বিক্রির মতো কাজে আমরা বা আমাদের অ্যাসোসিয়শনের সদস্যভুক্ত কোনো কোম্পানি লিপ্ত নেই। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নির্ধারিত মূল্যের বাইরে মেডিকেল ডিভাইস বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। কারণ চিকিৎসক এসব ভাল্ব বা পেসমেকার রোগীর শরীরে লাগানোর আগে ঔষধ প্রশাসনের স্টিকার, মূল্য ও মেয়াদ আছে কিনা সেটি দেখেন। এমনকি ডিভাইসটি লাগানোর পর এর প্যাকেট রোগীকে দিয়ে দেওয়া হয়। এটি একটি নিয়মে পরিণত হয়েছে।

মেডিকেল ডিভাইস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, একটি শৃঙ্খলা যদি আরেকটি শৃঙ্খলার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তাহলে সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হয়। দেশে মেডিকেল ডিভাইসের ৯৫ ভাগই আমদানি করা হয়। আমরা চেষ্টা করি হার্টের ভাল্ব, রিং, পেসমেকারসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ডিভাইস রেজিস্ট্রেশন করে বিক্রি মূল্য নিয়ে বাজারজাত করার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ক্লিনিক শাখার সহকারী পরিচালক ডা. মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখা থেকে যেটি করে থাকি, জেলা হাসপাতাল থেকে বিশেষায়িত হাসপাতাল পর্যন্ত যন্ত্রপাতিগুলো ফলোআপ করি। সরকারি হাসপাতালগুলোতে মেডিকেল ডিভাইসগুলোর দাম নিয়মিত তদারকি করি। এক্ষেত্রে সমস্যা হলো প্রাইভেট হাসপাতালগুলো। সেগুলোর সঙ্গে আমদানিকারক কোম্পানিগুলোর একটি মিউচুয়াল আন্ডারসেন্ডিং থাকে। তারা নিজেরা ইচ্ছেমতো দাম দিয়ে সেগুলো কেনাকাটা করে এবং বিক্রিও সেই অনুযায়ী একটি দাম নির্ধারণের মাধ্যমে করে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমরা প্রতিটি আমদানিকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে একটি মূল্য সনদ প্রদান করি। পাশাপাশি ওই পণ্যের রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার সময় নির্দেশনা দেওয়া হয়, প্যাকেজিংয়ে পণ্যের নাম, ব্যাচ নম্বর, উৎপাদন মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, রেজিস্ট্রেশন নম্বর এবং সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বাধ্যতামূলক দেওয়ার। মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যের ক্ষেত্রে আমাদের সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন হচ্ছে, সেগুলো নট ফর সেল লিখে আলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। সেগুলো সাধারণ পণ্যের সঙ্গে থাকার অবকাশ নেই। আমরা যাদের রেজিস্ট্রেশন দিয়ে থাকি তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো দুই বছরে দুইবার তদারকি করা হয়।

কিন্তু দ্য স্পন্দন লিমিটেডের সিইও জানান, তাদের কোম্পানি কখনো ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে তদারকি করা হয়নি।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের উপ-প্রধান মাহমুদুল হাসানসহ আরও অনেকে।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর