গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ছাত্র-ছাত্রীর ও পরিক্ষার্থী বাড়লেও বাড়েনি জিপিএ-৫ ও এসএসসি পরীক্ষার পাশের সংখ্যা। এবার বেড়েছে শুধু ফেল করা শিক্ষার্থীর হার। শিক্ষাখাতে সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন হলেও শিক্ষা ব্যবস্থার এমন বেহাল অবস্থায় উদ্বিগ্ন সর্বমহলের লোকজন। এর প্রধান কারণ হিসেবে তারা দেখছেন, মোবাইল ও মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থী। ফলে দিন দিন বাড়ছে বাল্য বিবাহও। ত-বে সব সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থা আরো উন্নত হওয়ার দাবী কালিয়াকৈরবাসী।
এলাকাবাসী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈরে এই সরকারের আমলে সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে সুন্দর সুন্দর ভবণ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, চেয়ার, টেবিল, আসবাবপত্র, আকর্ষণীক সুন্দর ডিজাইনের রং, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা করা, খেলাট মাঠ, শহিদমিনারসহ শিক্ষাখাতের ব্যাপক উন্নয়ন ও শিক্ষার মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করেছে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আলহাজ্ব এ্যাড. আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি’র দিক-নির্দেশনায় কালিয়াকৈরের শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করে উপজেলা প্রশাসন। অথচ এবার এসএসসি পরিক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছিল এ উপজেলার ৪৮টি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল ও ৮টি মাদ্রাসার মোট ৭হাজার ৪২০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাশ ৪হাজার ৯৯৯জন, ৪৮০জন জিপিএ-৫ এবং ফেল করেছে ২হাজার ৪২১জন।
কিন্তু ২০২২সালে এসএসসি পরিক্ষার্থী ছিল ৬হাজার ৬০৯জন। এর মধ্যে পাশ ৫হাজার ২৮৫জন, ৭০২জন জিপিএ-৫ এবং ফেল ছিল ১হাজার ৩২৪জন। সে হিসেবে তুলনামূলক এবার পরিক্ষার্থী বাড়লেও কমেছে জিপিএ-৫ ও পাশের হার দুটোই। গত বছরের চেয়ে বেড়েছে শুধু ফেল করা শিক্ষার্থী হার। সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের পরেও শিক্ষা ব্যবস্থার এমন বেহাল অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কালিয়াকৈরের সর্ব মহলের লোকজন। তারা এর প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন, করোনার থাবায় অনলাইনে ক্লাসের জন্য শিক্ষার্থীদের হাতে মোবাইল ও মাদকে আসক্ত। ওই সময় অনলাইনে ক্লাসের বাইরে বিভিন্ন গেইম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঝুঁকে পড়ে শিক্ষার্থীরা। আর এভাবেই মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। শুধু আসক্তই নয়, মোবাইল যোগাযোগের মাধ্যমে তারা গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে।
ফলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বাল্যবিবাহ। অপর দিকে মাদকের বিস্তার প্রভাবে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরাও। জনসচেনতার অভাব, অভিভাবক-শিক্ষককের দায়িত্বহীনতাসহ নানা কারণেও লেখাপড়া বিমুখ হয়ে উঠছে শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের মাঝে ১হাজার ৪'শটির উপরে আই ট্যাব বিতরণ করেছে সরকার। এবার এসএসসি ফলাফল খারাপ হওয়ায় সেই আই ট্যাব নিয়েও দুশ্চিন্তায় অভিভাবকসহ স্থানীয়রা। তবে অভিভাবকরা ছেলে-মেয়ের প্রথম শিক্ষক উল্লেখ করে আরো সচেতন হওয়ার আহব্বান জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এছাড়াও ছেলে-মেয়েরা কোথায় যায়? কি করে? কার সঙ্গে মিশে? সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে কিনা? এবং ঠিকমতো লেখাপড়া করে কিনা? সেদিকেও খোঁজ-খবর রাখার অনুরোধ জানান উপজেলা প্রশাসন।
সারা দেশে এবার এসএসসি ফলাফল খারাপ উল্লেখ করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাকির হোসেন মোল্লা জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর সিলেবাস বেশি ছিল। করোনার প্রভাব, অভিভাবক ও শিক্ষক সে ভাবে পারফমেন্স করেনি। তবে শিক্ষার্থীরা কোনো কিছুতে আসক্ত হয়েও কম লেখাপড়া করায় পরিক্ষার ফলাফল খারাপ হতে পারে। এক্ষেত্রে শিক্ষক, অভিভাবকসহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিক্ষার্থীরা রেজাল্ট ভাল করতে পারতো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা মোবাইল দেখতে দেখতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এমন কি মোবাইল ব্যবহারে বাল্য বিবাহে আসক্ত হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীসহ শিশু-কিশোরও। আবার মাদকাসক্তদের সঙ্গে মিশতে মিশতে শিক্ষার্থীরাও মাদকেও আসক্ত হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে এবছর এখানে এসএসসি ফলাফল খারাপ হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ১১দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের সচেতনতামূলক অভিযান অব্যাহত থাকবে।
মন্তব্য করুন: