মঙ্গলবার, ১৭ই জুন ২০২৫, ২রা আষাঢ় ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল dailyvobnews@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • আ. লীগ-বিএনপি একসঙ্গে আন্দোলন করতে পারে
  • শিরোপা জিতে র‍্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি দক্ষিণ আফ্রিকার
  • ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করার প্রস্তাব
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে যেসব ফল
  • ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে স্কুলছাত্রীকে হত্যা, প্রতিবেশী গ্রেপ্তার
  • শেখ হাসিনা-কামালকে হাজির হতে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার নির্দেশ
  • ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তেল আবিবের মার্কিন দূতাবাস ক্ষতিগ্রস্ত
  • গলাচিপায় ডেঙ্গুতে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু
  • শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে শুনানি আজ
  • যমুনা সেতুতে ২৪ ঘণ্টায় ৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা টোল আদায়

প্রতিবেশী নির্যাতিত হচ্ছে, অথচ কেউ কিছু বলে না—কেন?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত:
১৬ জুন ২০২৫, ১৮:১৮

ভোর সাড়ে চারটা। অফিস থেকে ফিরে সিএনজি অটোরিকশা থেকে নেমে বাসার ফটকের তালা খুলছি। প্রতি সপ্তাহে একদিন এমন ভোরবেলায় ফিরতে হয়। ভাবছিলাম, নিশ্চয়ই পুরো বিল্ডিং ঘুমে ডুবে আছে।

কিন্তু দোতলায় পৌঁছে বি-ফোর ফ্ল্যাটের দরজায় চোখ আটকে গেল। দরজা খানিকটা খোলা, ভিতরে আলো জ্বলছে। এত ভোরে, এই নিস্তব্ধতায়, ফ্ল্যাটের দরজা খোলা কেন?
কৌতূহলে কয়েক সেকেন্ড থেমে গেলাম। তখনই ভেসে এলো চাপা কান্নার শব্দ—নারীর কান্না।

বুকটা ধক করে উঠল, কিন্তু থামিনি। ওপরে উঠে ফ্ল্যাটে ঢুকতেই দেখি, আমার স্ত্রী ও মেয়ে দুজনেই জেগে। চোখে ঘুম নেই কারও। জানলাম, অনেক রাত থেকেই নিচে ঝগড়া হচ্ছে।

চিৎকার, গলা ধাক্কা, মারধর—এসব যেন নিত্যদিনের সাউন্ডট্র্যাক। প্রশ্ন জাগে, কেউ কেন এগিয়ে আসে না? আমরা কেন শুধু শুনে যাই, দেখেও না দেখার ভান করি?
শুধু আমরা না—এই বাসার কেউই কিছু বলে না। কেবল দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখে, হয়তো দীর্ঘশ্বাস ফেলে, আবার নিজের জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ যেন এক অলিখিত নিয়ম—'নিজের ঘরের খবর রাখো, অন্যের জীবনে নাক গলিয়ো না।' এই নিয়মে চলতে চলতে আমরা সবাই ভোতা হয়ে গেছি।

এই ঘটনাটি কয়েক বছর আগের হলেও কেবল এই বাসা না, শহরের কোথাও না কোথাও সেই একই দৃশ্য। পাশের বাসায় বউ পেটানোর শব্দ, শিশুর কান্না, কাজের মেয়ের আর্তনাদ—সব শুনি, কিন্তু কেউ কিছু বলি না। কারণ আমরা ভাবি, ওদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। সেখানে আমাদের কিছু করার নেই। কেউ কেউ ভাবে, প্রতিবাদ করলে নিজেই বিপদে পড়বো। থানাপুলিশ, কোর্ট-কাচারি—কে এই ঝামেলা নিতে চায়?

কিন্তু এই নিরবতা কি আমাদের অপরাধী করে না? যদি কোনোদিন সেই নির্যাতনের জায়গায় আমাদের মা থাকতো, বোন থাকতো, অথবা আমি নিজে—তখনও কি চাইতাম, প্রতিবেশীরা চুপ থাকুক? শহরের এই ফ্ল্যাটজীবনে আমরা যেন আত্মকেন্দ্রিক এক মানবপ্রজাতিতে রূপ নিয়েছি। পাশের মানুষটি কাঁদছে, আর আমরা আলো জ্বালিয়ে, দরজা খুলে এদিক-সেদিক তাকিয়ে, আবার ঘুমিয়ে পড়ি। যেন কিছুই ঘটেনি।

ফ্ল্যাটের জীবন আমাদের শিখিয়েছে গা বাঁচানোর কৌশল। পাশের দরজায় কান্না শুনলে হেডফোনটা টেনে নিই কানে, কিংবা টিভির ভলিউম বাড়িয়ে দিই। ‘নিজের সমস্যাই যথেষ্ট’—এই অজুহাতে আমরা প্রতিবেশীর চোখের জলকেও উপেক্ষা করতে পারি। কিন্তু যে নির্যাতিত হচ্ছে, তার জন্য আমাদের এই নীরবতা কী বার্তা বয়ে আনে? ‘তোমার যন্ত্রণায় কেউ হস্তক্ষেপ করবে না’—এটাই তো? শহুরে জীবনের নির্মমতা হলো, আমরা একই ছাদের নিচে থেকেও একা। কেউ কারো নয়।

এই মানসিকতা কি মানবিক? আমরা কি সত্যিই এতটাই বদলে গেছি? সেদিন যদি কেউ সাহস করে বি-ফোরের দরজায় নাড়া দিতো, একটা প্রতিবাদ করতো, তাহলে হয়তো সেই নারীর চোখে একটুখানি সাহস জাগতো। হয়তো তার জীবনটা একটু বদলাতো।

একটা সমাজ তখনই মানবিক হয়, যখন তার মানুষগুলো অন্যের ব্যথা বুঝতে পারে। ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ মানে হৃদয় বন্ধ হওয়া নয়। আসুন, আমরা আজ থেকেই ছোট্ট একটা প্রচেষ্টা শুরু করি। পাশের বাসার কান্না শুনলে একবার জানতে চাই, ‘কিছু প্রয়োজন আছে?’ হয়তো এই একটি প্রশ্নই কারো জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। নীরবতা ভাঙার সময় এখনই।

আমরা যদি সবাই একটু করে এগিয়ে যাই, তাহলে হয়তো একদিন এই নীরবতার সংস্কৃতি বদলাবে। প্রতিবেশী মানেই তো কেবল পাশে থাকা নয়, পাশে দাঁড়ানোও। এ দায় এড়ানোর নয়। কারণ, অন্যের নির্যাতনের সময় নীরব থাকা মানেই, সেই নির্যাতনকে প্রশ্রয় দেওয়া। এখনও সময় আছে—চোখ মেলে তাকাতে হবে, কণ্ঠ খুলে প্রতিবাদ করতে হবে। তবেই হয়তো রাতবিরাতে আর কেউ চিৎকার করে বলবে না—‘ওরে মা, মরে গেলাম।'

 


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর