বুধবার, ১১ই জুন ২০২৫, ২৮শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল dailyvobnews@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • মহাসাগরে বিধ্বস্ত প্লেন, সব আরোহী নিহত
  • মানিকগঞ্জে আগুনে পুড়ল ৭ দোকান
  • বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ১০টি দ্বীপ
  • ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা: প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বাড়াচ্ছে পাকিস্তান
  • ঢাকায় বৃষ্টির আভাস, গরম কমবে কিনা জানাল আবহাওয়া অফিস
  • পর্যটন উন্নয়ন নয় আমলাতন্ত্র প্রতিপালন
  • ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দিয়ে মডেল অঞ্জলির আত্মহত্যা
  • বিক্ষোভে উত্তাল লস অ্যাঞ্জেলেস, কারফিউ জারি
  • ওজন কমাতে কালো তিল
  • ফুসফুসের যত্নে ৫ প্রাকৃতিক উপাদান

এই ৬টি খাবার ক্যান্সার ডেকে আনে, বলছেন হার্ভার্ডের চিকিৎসক

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত:
১০ জুন ২০২৫, ১৫:১৭

ক্যান্সার এই শব্দটাই যেন আতঙ্কের নাম। জিনগত ও পরিবেশগত কারণ যত গুরুত্বপূর্ণ, দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসও চুপিসারে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। হার্ভার্ড-প্রশিক্ষিত গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডা. সৌরভ শেঠি সম্প্রতি একটি ভাইরাল ভিডিওতে এমনই ছয়টি খাবারের কথা তুলে ধরেছেন, যেগুলো ক্যানসার সৃষ্টির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।

অবাক করা বিষয় হলো, এই খাবারগুলো কমিয়ে দিলে বা খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিলেই দীর্ঘমেয়াদে শরীরের জন্য ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই ছয়টি খাবার এবং কীভাবে আপনি স্বাস্থ্যকর বিকল্প দিয়ে শরীরকে আরও সুরক্ষিত রাখতে পারেন।

প্রক্রিয়াজাত মাংস: নীরব ঘাতক

সসেজ, সালামি কিংবা প্রিজার্ভড মাংসকে অনেকেই প্রোটিনসমৃদ্ধ সহজ খাবার মনে করেন। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এই ধরনের প্রক্রিয়াজাত মাংস গ্রুপ-১ কার্সিনোজেন, অর্থাৎ এগুলো ক্যান্সার সৃষ্টি করে এমন প্রমাণ অত্যন্ত জোরালো।

ডা. শেঠি জানাচ্ছেন, এই মাংসে ব্যবহৃত নাইট্রেট ও সংরক্ষক রাসায়নিক পদার্থগুলো অন্ত্রের কোষের ক্ষতি করে এবং ধীরে ধীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

বিকল্প কী?

প্রক্রিয়াজাত মাংসের পরিবর্তে বাসায় রান্না করা গ্রিলড চিকেন, দুধ-ডাল জাতীয় উদ্ভিজ্জ প্রোটিন বা মসুর ডাল হতে পারে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর বিকল্প। এগুলো শুধু কম ক্ষতিকরই নয়, বরং আঁশ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর, যা অন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

চিনি-সমৃদ্ধ পানীয়: নীরবে পুষ্টি দেয় ক্যান্সারকে

কোলা বা ফ্লেভারড কোমল পানীয় অনেকেই এনার্জি বুস্টার ভেবে পান করেন। কিন্তু ডা. শেঠি সতর্ক করছেন, এই পানীয়গুলো শুধু রক্তে চিনি বাড়ায় না, বরং দীর্ঘমেয়াদে জটিল প্রদাহ তৈরি করে, যা ক্যানসার বৃদ্ধির পরিবেশ তৈরি করে।

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত চিনি-সমৃদ্ধ পানীয় পান করলে স্তন, অগ্ন্যাশয় ও কোলন ক্যান্সাররের ঝুঁকি বাড়ে।

বিকল্প কী?

প্রাকৃতিক ডাবের পানি, ঘরোয়া ফল মিশ্রিত পানি কিংবা হার্বাল চা হতে পারে চমৎকার বিকল্প। এসব পানীয় শুধু হাইড্রেশনই বজায় রাখে না, বরং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর যা শরীরকে ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।

অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার: প্রতিটি কামড়ে বাড়ে প্রদাহ

ভাজা সমুচা কিংবা ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের মতো খাবার অনেকেই চটজলদি স্বস্তি হিসেবে খেয়ে থাকেন। কিন্তু এগুলোতে তৈরি হয় অ্যাক্রিলামাইড, এক ধরনের রাসায়নিক যা দীর্ঘমেয়াদে শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি করে এবং ক্যান্সাররের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।
ডা. শেঠি জানাচ্ছেন, পুরনো তেলে বারবার ভাজার অভ্যাস ক্যান্সার সৃষ্টির অন্যতম কারণ হতে পারে।

বিকল্প কী?

ভাজা খাবারের বিকল্প হিসেবে বেক বা এয়ার-ফ্রাইড স্ন্যাকস হতে পারে নিরাপদ। হালকা অলিভ অয়েলে ভাজা বা ভাপানো সবজিও স্বাদ ও স্বাস্থ্য দুটিই বজায় রাখতে পারে।

পুড়ে যাওয়া বা গ্রিল করা মাংস: সুস্বাদু হলেও বিপজ্জনক

চুলায় কিংবা বারবিকিউ গ্রিলে রান্না করা মাংসের ধোঁয়ার স্বাদ অনেকের পছন্দ। কিন্তু যখন মাংস অতিরিক্ত পুড়ে যায় বা গ্রিল হয়, তখন তৈরি হয় HCAs (Heterocyclic Amines) এবং PAHs (Polycyclic Aromatic Hydrocarbons) নামক যৌগ, যা ডিএনএর ক্ষতি করে এবং ক্যান্সাররের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।

বিকল্প কী?

উচ্চতাপে গ্রিল না করে ধীরে রান্না করা, ভাপানো বা বেক করে রান্না করা ভালো। যদি গ্রিল করতেই হয়, তাহলে রান্নার আগে মাংস ম্যারিনেট করলে ক্ষতিকর যৌগ কম তৈরি হয়। রোজমেরি, থাইমের মতো হার্ব ব্যবহারে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও যোগ হয়।

অ্যালকোহল: হরমোন-নির্ভর ক্যান্সাররের নেপথ্য খেলোয়াড়

প্রতিদিন এক গ্লাস ওয়াইন হৃদ্‌যন্ত্রের জন্য উপকারী এমন ধারণা জনপ্রিয় হলেও ডা. শেঠি জানাচ্ছেন, অ্যালকোহল এমন এক উপাদান যা স্তন ও লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

এটি শরীরে ইস্ট্রোজেনের ভারসাম্য নষ্ট করে, পাশাপাশি ডিএনএ মেরামতকারী উপাদান ফোলেট শোষণে বাধা দেয়।

বিকল্প কী?

কোম্বুচা (অ্যালকোহলবিহীন), বিটরুট কানজি কিংবা ডালিমের রস হতে পারে স্বাস্থ্যসম্মত বিকল্প। এগুলোতে প্রোবায়োটিক ও পলিফেনল থাকে, যা অন্ত্র এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

অতিমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত খাবার: দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহের সহযোগী
রেডি-টু-ইট খাবার, ইনস্ট্যান্ট নুডলস কিংবা প্যাকেটজাত স্ন্যাকস ব্যস্ত জীবনে সহজ মনে হলেও এগুলোতে থাকে কৃত্রিম রং, সংরক্ষক, চিনি ও ক্ষতিকর চর্বি, যা শরীর থেকে প্রাকৃতিক পুষ্টি কেড়ে নেয়।

ডা. শেঠি বলছেন, এই ধরনের খাবার বারবার খাওয়া ক্রনিক ইনফ্ল্যামেশন বা দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ তৈরি করে, যা ক্যানসার বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

বিকল্প কী?

ঘরেই তৈরি সহজ খাবার যেমন খিচুড়ি, ওটস উপমা বা দুধ-ডাল-সবজি দিয়ে রান্না করা খাবার হতে পারে দারুণ স্বাস্থ্যকর বিকল্প। এতে থাকে প্রাকৃতিক পুষ্টি, আঁশ ও ক্যানসার প্রতিরোধকারী উপাদান।

ক্যান্সার প্রতিরোধ শুধু চিকিৎসার বিষয় নয়, এটি শুরু হয় প্রতিদিনের প্লেট থেকেই। হার্ভার্ড প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু সহজ পরিবর্তন যেমন অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবার কমানো, চিনি ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা শরীরকে দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে।

একটি ভালো স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যতের জন্য আজ থেকেই নতুন অভ্যাস গড়ে তোলাই হতে পারে সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা।

 


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর