প্রকাশিত:
৩ জুন ২০২৫, ১৬:০৭
২০২৫ সালের ১৪ মে, ভারতের আসাম রাইফেলস বাহিনী মিয়ানমার সীমান্তবর্তী মণিপুর রাজ্যের চান্দেল জেলায় অভিযান চালিয়ে মিয়ানমারের বিদ্রোহী সংগঠন পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ)-এর অন্তর্ভুক্ত পা কা ফা (পিকেপি)-এর ১০ জন সদস্যকে গুলি করে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে তিনজন কিশোর ছিল বলে জানা গেছে।
ভারতের দাবি, নিহতরা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত ছিল এবং আসাম রাইফেলসের একটি টহল দলের ওপর গুলি চালানোর জবাবে তাদের হত্যা করা হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, নিহতরা ক্যামোফ্লাজ ইউনিফর্ম পরিহিত ছিল এবং ঘটনাস্থল থেকে সাতটি একে-৪৭ রাইফেল ও একটি রকেটচালিত গ্রেনেড লঞ্চার উদ্ধার করা হয়েছে।
তবে ভিন্ন দাবি করেছে মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি)। তাদের মতে, এসব যোদ্ধাকে আটক করে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। সূত্রের বরাতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, নিহতরা মিয়ানমারের তামুর জেলার একটি ক্যাম্পে অবস্থান করছিল, আর ভারতীয় বাহিনী তাদের অবস্থান সম্পর্কে আগেই জানত – যা মিয়ানমারের সামরিক সরকার সরবরাহ করেছিল।
এ ঘটনার পর ভারতের পক্ষ থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে কিছু তথ্যবিভ্রান্তি লক্ষ্য করা গেছে। ১৬ মে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, টহলদলকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হলে তারা আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। পরে, ২১ মে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিহতদের ‘পিকেপির ক্যাডার’ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং জানায়, তাদের উদ্দেশ্য ছিল সীমান্তে চলমান বেড়া নির্মাণ কাজে বাধা দেওয়া ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের ক্ষতি সাধন করা।
এই ঘটনার কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ভারতের পক্ষ থেকে এখনো আল জাজিরা পায়নি। তবে এটি ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী এবং মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।
উল্লেখ্য, গত দুই বছর ধরে মণিপুর রাজ্যে জাতিগত সহিংসতা চলমান। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ প্রায়ই অভিযোগ করে আসছে যে মিয়ানমার থেকে আগত অভিবাসীরা এই সহিংসতাকে উস্কে দিচ্ছে। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ প্রকল্প এই পুরনো জাতিগত টানাপোড়েনে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
মিয়ানমার ও উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজনীতি বিষয়ক গবেষক অংশুমান চৌধুরী বলেন, “এই হত্যাকাণ্ড ভারতীয় বাহিনী এবং মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের মধ্যকার সংঘর্ষের ধরন পাল্টে দিতে পারে। অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোও ঘটনাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, যার ফলে এই উত্তেজনা দ্রুত অন্যত্র ছড়িয়ে পড়তে পারে।”
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এই ঘটনা ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।
মন্তব্য করুন: