প্রকাশিত:
৩ জুন ২০২৫, ১৫:৫৩
সূর্য কেবল আলো ও তাপই দেয় না, মাঝে মাঝে তার ভেতর থেকে এমন শক্তিশালী একধরনের বিস্ফোরণ ঘটে যা পৃথিবীর প্রযুক্তি ব্যবস্থার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। একে বলা হয় “সৌর ঝড়” বা “Solar Storm”। সম্প্রতি পৃথিবীমুখী একটি শক্তিশালী সৌর ঝড়ের আশঙ্কা থাকায় বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে।
🔭 সৌর ঝড় কী?
সৌর ঝড় হচ্ছে সূর্যের পৃষ্ঠে ঘটে যাওয়া বিশাল বিস্ফোরণ বা চৌম্বকীয় পরিবর্তনের কারণে উচ্চ-শক্তির কণা ও বিকিরণ মহাকাশে ছড়িয়ে পড়া। একে “Coronal Mass Ejection (CME)” বা “সৌর প্রক্ষিপ্ত পদার্থের বিস্ফোরণ” বলা হয়। এই ঝড় পৃথিবীর দিকে ধেয়ে এলে আমাদের স্যাটেলাইট, কমিউনিকেশন সিস্টেম, বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং এমনকি জিপিএস সিগন্যাল পর্যন্ত ব্যাহত হতে পারে।
⚡ কেন হয় সৌর ঝড়?
সূর্যের মধ্যবর্তী অঞ্চলে চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের অস্বাভাবিক আচরণ ও প্লাজমার ঘূর্ণন শক্তি বাড়তে থাকলে তা একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়। এই বিস্ফোরণ থেকেই সৃষ্টি হয় সৌর ঝড়।
মূল কারণগুলো হলো:
সূর্যের চৌম্বকীয় শক্তির হঠাৎ পরিবর্তন
সূর্যের কালো দাগ বা “Sunspot”-এর আশপাশে অস্থিরতা
সূর্যের বাইরের স্তরে (Corona) গ্যাসের চাপ ও উত্তেজনা বৃদ্ধি
🧭 সৌর ঝড়ের প্রভাব কী?
যদি কোনো সৌর ঝড় পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রকে স্পর্শ করে, তাহলে এর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব দেখা যায়:
স্যাটেলাইট ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা
জিপিএস ও বিমান নেভিগেশন ব্যাহত
বিদ্যুৎ গ্রিডে সমস্যা ও সম্ভাব্য ব্ল্যাকআউট
মেরু অঞ্চলগুলোতে অসাধারণ অরোরা (Northern Lights)
স্পেস স্টেশনের যন্ত্রপাতির উপর প্রভাব
🛰️ সাম্প্রতিক সৌর ঝড় ও বিজ্ঞানীদের সতর্কতা
NASA এবং NOAA (National Oceanic and Atmospheric Administration) নিয়মিত সৌর ঝড় পর্যবেক্ষণ করে। সম্প্রতি তারা সতর্ক করে বলেছে যে, ২০২৫ সালের মধ্যে সৌরচক্রের সর্বোচ্চ সক্রিয়তা পর্যায়ে পৌঁছাবে, যেটাকে “Solar Maximum” বলা হয়। এই সময় ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।
🌍 আমাদের করণীয় কী?
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন—ভবিষ্যতের শক্তিশালী সৌর ঝড় থেকে বাঁচতে বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্যাটেলাইট শিল্ডিং প্রযুক্তি, এবং বিদ্যুৎ গ্রিড সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি।
সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদের ভুয়া গুজব এড়িয়ে বৈজ্ঞানিক তথ্য ও সতর্কতা অনুসরণ করা উচিত।
সৌর ঝড় একটি মহাকাশীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা সময়মতো ভবিষ্যদ্বাণী ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এর প্রভাব অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে আজ আমরা আগেভাগেই এ ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে পারি।
মন্তব্য করুন: