প্রকাশিত:
৩১ মে ২০২৫, ১৬:২৯
দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততা ও সময়ের অভাবে বিশ্রামের সুযোগ ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। অনেকেই পেশাগত দায়বদ্ধতার কারণে রাতে জেগে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে ঘুমের পরিমাণ ও মানের উপর। সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের ইউনিভার্সিটি অফ গ্রোনিনজেন পরিচালিত একটি দীর্ঘমেয়াদী গবেষণায় উঠে এসেছে উদ্বেগজনক তথ্য—রাত জাগার কারণে মানুষের বোধশক্তি বা কগনিটিভ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে।
১০ বছরব্যাপী এই গবেষণায় অংশ নেন ৪০ বছরের বেশি বয়সী প্রায় ২৪ হাজার মানুষ। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত যারা রাতে জেগে কাজ করেন, তাঁদের বোধশক্তি প্রতি বছর গড়ে ০.৮ শতাংশ করে কমে যাচ্ছে। আশ্চর্যের বিষয়, শিক্ষিত পেশাজীবীদের মধ্যেই এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। ছাত্র, শিক্ষক ও অফিসকর্মীদের মধ্যে রাত জাগার হার তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায়, তাদের ওপর প্রভাবটিও বেশি পড়ছে।
মানবদেহের নিজস্ব একটি ‘জৈবঘড়ি’ রয়েছে, যা ঘুম ও জাগরণের স্বাভাবিক সময় নির্ধারণ করে। এই ছন্দ অনুযায়ী সকালবেলায় ঘুম থেকে ওঠা ও রাতে ঘুমানোই স্বাভাবিক। কিন্তু আধুনিক জীবনের চাপে অনেকেই সেই স্বাভাবিক ছন্দের ব্যতিক্রম ঘটাচ্ছেন। গবেষণায় উঠে এসেছে, মধ্যবয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ নিয়মিত রাত জেগে কাজ করেন।
তাদের মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশ মানুষ খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন। এই বৈসাদৃশ্য ‘সোশ্যাল জেট ল্যাগ’ তৈরি করছে, যা দেহ ও মস্তিষ্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, রাত জেগে কাজ করার পাশাপাশি ধূমপান ও অনিদ্রা—এই দুই অভ্যাসও বোধশক্তি হ্রাসে অনুঘটকের ভূমিকা রাখছে। গবেষণা বলছে, শুধুমাত্র ধূমপানের প্রভাবেই বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা প্রায় ১৯ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনিদ্রার প্রভাবেও দেখা যাচ্ছে ‘ব্রেন ফগ’ বা ধূসর মস্তিষ্কের লক্ষণ।
দীর্ঘমেয়াদে এসব সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে।
অন্যদিকে, তুলনামূলকভাবে কম শিক্ষিত মানুষদের মধ্যে ৯টা-৫টা কাজের বদলে দিনের বিভিন্ন সময়ে কাজ ভাগ করে নেওয়ার প্রবণতা বেশি থাকায়, তাঁদের মধ্যে রাত জাগার হার অনেক কম। ফলে তাদের বোধশক্তির উপর প্রভাবও তুলনামূলকভাবে কম পড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরের প্রাকৃতিক ছন্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার অভ্যাস গড়ে তুললে দীর্ঘমেয়াদে মানসিক স্বাস্থ্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা রক্ষা করা সম্ভব।
মন্তব্য করুন: