প্রকাশিত:
৩১ মে ২০২৫, ১৩:৫৬
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ আয়ের মালিকদের ওপর করের চাপ বাড়তে পারে। এসব টাকা বৈধ করতে হলে এখনকার তুলনায় তিন থেকে পাঁচ গুণ বেশি কর দিতে হতে পারে। কেউ যদি অবৈধ অর্থ দিয়ে ফ্ল্যাট বা জমি কিনে টাকাটা বৈধ করতে চান, তাহলে তাকে অনেক বেশি কর দিতে হবে।
এর মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ ব্যবহার নিরুত্সাহিত করা ও জমির প্রকৃত বাজারমূল্যের সঙ্গে করহার সামঞ্জস্য আনার চেষ্টা করা হবে। আগামী অর্থবছর থেকে কেউ যদি অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে জমি বা ফ্ল্যাট কেনেন, তবে সংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থা তার অর্থের উত্স সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারবে। আগের মতো সহজ ছাড় আর থাকছে না।
আসন্ন বাজেট আগামী ২ জুন ঘোষণা করার কথা রয়েছে। সেদিন অর্থ উপদেষ্টা অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করার সুযোগ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিতে পারেন। বর্তমানে যেভাবে প্রতি বর্গমিটার হিসাবে কর নির্ধারণ করা হয়, সেই পদ্ধতিই থাকছে। তবে স্থানভেদে করহার ৩ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
তবে এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করার সুযোগ সীমিত রাখা হবে। শুধু ভবন, বাড়ি, ফ্ল্যাট, ফ্লোর স্পেস ও জমির ক্ষেত্রে এই সুযোগ দেওয়া হবে। বর্তমানে ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকায় প্রতি বর্গমিটারে সবচেয়ে বেশি হারে কর দিতে হয়। গুলশান, বনানী, মতিঝিল, তেজগাঁও, ধানমন্ডি, ওয়ারী, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, শাহবাগ, রমনা, পল্টন, কাফরুল, নিউ মার্কেট ও কলাবাগান থানা এলাকায় ফ্ল্যাট বা বাড়ির জন্য প্রতি বর্গমিটারে ৬ হাজার টাকা এবং জমির জন্য প্রতি বর্গমিটারে ১৫ হাজার টাকা কর দিতে হয়। নতুন বাজেটে এই হার পাঁচ গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
এছাড়া, কর কর্মকর্তারা যদি কর ফাঁকির মাধ্যমে গোপন রাখা সম্পদ শনাক্ত করেন, তাহলে সাধারণ করদাতাদের তুলনায় আরো বেশি জরিমানা আদায় করা হবে। বিশেষত ঢাকাসহ দেশের অভিজাত এলাকায়, যেখানে জমি ও ফ্ল্যাটের প্রকৃত বাজারমূল্য দলিলে উল্লেখিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি, সেসব জায়গায় অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের ওপর কর পাঁচগুণ বাড়ানো হতে পারে। তবে যেসব এলাকায় এ পার্থক্য তুলনামূলকভাবে কম, সেখানে তিনগুণ করের প্রস্তাব করা হচ্ছে।
এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর বেশ কিছু অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ বাতিল করেছে। ভবিষ্যতে যদি এ ধরনের সুযোগ রাখাও হয়, তাতে এত কঠিন শর্ত থাকবে যে অপ্রদর্শিত টাকা বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারাবে। তিনি আরো জানান, এবারের বাজেটে ‘প্রতি বর্গমিটার’ এর পরিবর্তে ‘প্রতি বর্গফুট’ হিসাবে কর নির্ধারণের কথাও ভাবা হচ্ছে।
এ বিষয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সিনিয়র সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া ইত্তেফাককে বলেন, এমনিতেই এ সেক্টরের অবস্থা খুবই নাজুক। যদি কর বাড়ানো হয় এবং শর্ত কড়াকড়ি করা হয়, তাহলে আবাসন খাত একেবারেই ধস নামবে। তখন কেউ আর ফ্ল্যাট কিনতে চাইবে না।
গত বাজেট পরবর্তী সময়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) হিসাব করে দেখিয়েছে, এলাকাভিত্তিক বর্তমান করহারে আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে প্রকৃত করহার গড়ে মাত্র ২.৩৮ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি করহার পাঁচগুণও করা হয়, বাজারমূল্য অনুযায়ী প্রকৃত করহার হবে ১০ শতাংশের কাছাকাছি, যা এখনো অনেক কম। ফলে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করে যারা ফ্ল্যাট কেনেন, তারা সাধারণ করদাতাদের তুলনায় বেশি সুবিধা পান। কর বাড়ানো ভালো উদ্যোগ হলেও, এভাবে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করার সুযোগই দেওয়া উচিত নয়।
২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার ফ্ল্যাটসহ নানা খাতে অপ্রর্দশিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দিয়েছিল, যেখানে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বৈধ করা হয়। এর বড় একটি অংশ আবাসন খাতেই বিনিয়োগ করা হয়েছিল। তবে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আবাসনে আসা অপ্রর্দশিত টাকার পরিমাণ নিয়ে এনবিআর বা রিহ্যাব কারো কাছেই নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।
মন্তব্য করুন: