প্রকাশিত:
২৬ মে ২০২৫, ১৩:৫১
ঢাকার কেরানীগঞ্জে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা এবং প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র। দুস্থ, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও বিধবা ভাতার টাকা মোবাইল হ্যাকের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্রটি। টাকা না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন ভাতাভোগীরা। ভাতার টাকা না পেয়ে সমাজসেবা অফিসে ধরনা দিয়ে কান্নাকাটি করে নিরুপায় হয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন কেরানীগঞ্জের ভাতাভোগীরা।
এতদিন সোনালী ব্যাংক থেকেই ভাতার টাকা উত্তোলন করত। সমাজসেবা অফিস কর্তৃক ভাতাভোগীদের ভাতা বই ডিজিটালাইজেশন অর্থাৎ এমআইএস এন্ট্রি করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে ভাতা বই, ভাতাভোগীর মোবাইল নম্বর এবং এনআইডি কার্ড জমা প্রদান করা হয়। কেরানীগঞ্জে বয়স্ক ভাতার আওতাভুক্ত ব্যক্তির মোবাইলের নগদ অ্যাকাউন্টে ভাতার টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও পায় না টাকা।
আজ (২৬ মে) সোমবার সকালে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে টাকা না পাওয়া ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অনেকেই টাকা না পেয়ে প্রতিদিনই ধরনা দিচ্ছে কেরানীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসে। কিন্তু মিলছে না সমাধান। অনেকেই বসে আছে তাদের ভাতার টাকা না পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে। এসময় বেশ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, গত ছয় মাস থেকে ১ বছর আমাদের মোবাইলের নগদ অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা ঢুকেনি। তাই প্রায় সময় উপজেলা সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নিতে আসি।
ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধী শিশু হালিমার মা আকলিমা অভিযোগ করে বলেন, আমার প্রতিবন্ধী মেয়ের ভাতার টাকার মেসেজ আসে না দেখে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে এসেছি। কিন্তু তারা বলছে আমার টাকা আমার মোবাইলে পাঠানো হয়েছে। আমি তো কোনো মেসেজ পাইনি। তারা বলছে টাকা কেউ তুলে নিয়েছে মোবাইল থেকে। আমি গরিব মানুষ, এ টাকাটা দিয়ে আমি মেয়ে নিয়ে খেয়ে পরে বেঁচে আছি—বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বয়স্ক ভাতাভোগী মো: ইয়াকুব আলী বলেন, আজকে ১ বছর ধরে বয়স্ক ভাতার কার্ড পাইছি। কিন্তু টাকা পাইছি একবার। যতবার নগদ, বিকাশের দোকানে টাকা তুলতে যাই, বলে টাকা তো আসে নাই। আবার উপজেলা সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করলে তারা বলে টাকা পাবেন, এত অস্থির কেন হচ্ছেন। এখন আর ভাতার টাকার বিষয়ে কোথাও যাই না। কেননা ৩০০ টাকার জন্য ২০০ টাকা গাড়ি ভাড়া চলে যায়। আর এখান থেকে ওখানে এত ঘোরাঘুরি ভালো লাগে না। আজকেও ৩ ঘণ্টা ধরে উপজেলায় সমাজসেবা অফিসে বসে আছি।
বিধবা ভাতাভোগী রহিমা বেগম বলেন, আমি বিধবা ভাতা পেতাম অনেক বছর ধরে। আগে তিন মাস পরপর সোনালী ব্যাংক থেকে টাকা তুলতাম। এখন অনেকদিন ধরেই টাকা পাই না। বিকাশের দোকানে গেলে বলে টাকা আসে নাই। কিন্তু আমার মোবাইলে মেসেজ ঠিক আসে। এখন আমি লেখা-পড়া জানি না। মেসেজ আসলে আমার ছেলে বলে, আমি তখন নগদ-বিকাশের দোকানে যাই। কিন্তু টাকা আসে নাই বলে দোকানি। এখন অনেকদিন হলো টাকা পাই না। উপজেলায় স্যারদের কাছে গেলে তারা বলে আপনার টাকা আপনার মোবাইলে গিয়েছিলো, কেউ আপনার টাকা তুলে নিয়েছে। এখন আর কি বলুন, আল্লাহ যেভাবে চালায় সেইভাবেই চলুম।
বয়স্ক ভাতা ভোগকারী মো: জালাল হোসেন বলেন, আগে বই দিয়ে টাকা তুলছি। আর এখন মেসেজও আসে না, টাকা পাই না। মাঝে মধ্যে কোনা খোলা আসি, খবর নেই টাকা আইছে কি না। অফিস থেকে বলে নগদের দোকানে যান। দোকানে গেলে বলে টাকা আসে নাই। মেসেজ আসলে আইসেন। মেসেজও আসে না আর টাকা ও পাই না। ৬ মাস হলো বয়স্ক ভাতার টাকা পাই না। নগদ অ্যাকাউন্টে আসার কথা থাকলেও আজও সে টাকা পাইনি। পূর্বের ছয় মাসের টাকাও পাইনি, আরও দুই মাস চলে গেলো—কোনো মেসেজ আসে না।
বিষয়টি নিয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শিবলীজ্জামান জানান, আমাদের অফিসে প্রতিদিন ভাতাভোগকারীরা তাঁদের মোবাইলে মেসেজ আসেনি, টাকা পাচ্ছি না—এমন অভিযোগ নিয়ে আসে। একদল প্রতারকচক্র উপজেলা সমাজসেবা অফিসের নাম বলে ভাতাভোগকারীদের মোবাইলে কল করে বেশি টাকা দেওয়ার কথা বলে মোবাইল থেকে ওটিপি নিয়ে টাকা উঠিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্রটি।
এরকম সমস্যা নিয়ে প্রতিদিন আমাদের অফিসে আসছে ভুক্তভোগীরা। যাদের মোবাইল হ্যাক হয়েছে, আমরা তাদের মোবাইল নাম্বারটি পরিবর্তন করে দিচ্ছি। নাম্বার পরিবর্তন হলে প্রতারক চক্র টাকা তুলতে পারবে না। আমরা ভাতাভোগকারীদের বলতে চাই, আমাদের উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে কোনো ভাতাভোগীকে কল করে পিন কোড অথবা ওটিপির জন্য কল করা হয় না। কেউ কল করে সমাজসেবা অফিসের নাম বললে, আপনারা কেউ ওটিপি দেবেন না। সরাসরি অফিসে যোগাযোগ করবেন। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান এ কর্মকর্তা।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়া বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে আমি আজকেই সমাজসেবা অফিসারের সাথে কথা বলবো। যারা অসহায় গরিব মানুষের ভাতার টাকা নিয়ে প্রতারণা করছে, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত সেই সকল প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন: