শনিবার, ৩১শে মে ২০২৫, ১৭ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল dailyvobnews@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • শুরু হচ্ছে নতুন স্মার্ট এনআইডি কার্ড বিতরণ, কিভাবে পাবেন স্মার্ট কার্ড?
  • নোয়াখালীতে ঘরে ঢুকে নারীকে জবাই করে হত্যা, লাশ পুকুরে
  • ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে কানাডা, ম্যানিটোবায় জরুরি অবস্থা জারি
  • আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য হার্ভার্ডের বিকল্প গন্তব্য
  • ভারতের দাসত্ব করবে না বাংলাদেশ, প্রয়োজন হলে জীবন দেবো
  • জেনে নিন মাথায় নতুন চুল গজানোর দুর্দান্ত উপায়
  • ইশরাকের শপথ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন
  • দুর্ভোগ চরমে মাত্র তিন মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছেন ২৬ হাজার গ্রাহক
  • নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তাল সাগর, বন্দরে ৩ নম্বর সংকেত
  • এটিএম আজহারের খালাস উদযাপন করায় এনসিপিকে বর্জনের ঘোষণা

চাকরি ছেড়ে ওসমান এখন উদ্যোক্তা, বছরে আয় ২০ লাখ টাকা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত:
২৪ মে ২০২৫, ১৪:১১

ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছিলেন তিনি। করোনাভাইরাস মহামারির সময় চাকরি ছেড়ে চলে যান নিজ বাড়িতে, শুরু করেন খামারি জীবন। স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থার সাহায্য নিয়ে খামারে কেঁচো সার, মাংস ও দুধ উৎপাদনের কাজ শুরু করেন। এখন বছরে খরচ বাদে তাঁর আয় থাকে প্রায় ২০ লাখ টাকা।

এই উদ্যোক্তা হলেন ভোলার সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ছোট আলগী গ্রামের মো. ওসমান গনী। তিনি গড়ে তুলেছেন ‘ঐকতান অ্যাগ্রো’ নামের একটি খামার।

সম্প্রতি ছোট আলগী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ওসমান গনীর খামারের কাছেই উন্নত মানের ঘাসের আবাদ। তিনি প্রায় ৩ একর ২০ শতাংশ জমিতে গবাদি পশুর জন্য ঘাস চাষ করেছেন। এ খেতে কেঁচো সার ছাড়া কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় না।

প্রসঙ্গত, কেঁচো সার একটি জৈব সার, যা জমির উর্বরতা বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। এক মাসের বাসি গোবর খেয়ে কেঁচো মলত্যাগ করে এবং এর সঙ্গে কেঁচোর দেহ থেকে রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে এ সার তৈরি হয়। এটাকে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার বলা হয়।

ওসমানের খামারে ঢুকতেই বাঁ পাশে চোখে পড়ে কেঁচো সারের খামার, যেখানে পাকাভাবে ১০টি চেম্বার করা আছে। এ খামারের পশ্চিম পাশে গরুর খামার। এর এক পাশে উন্নত জাতের ৪টি দুধের গরু, আরেক পাশে মাংস উৎপাদনের জন্য প্রায় ১৫টি গরু আছে। খামারের পাশেই ছোট করে কার্যালয়। তার ওপরে কবুতরের খামার। পাশে ছাগল ও কেঁচো সারের খামার। এখানে আরও ৫০টি চেম্বার আছে, যেগুলোর কিছু পাকা, কিছু রিংস্ল্যাবের। এটির সামনে ফাঁকা জমিতে সবজি, বেগুন ও লেবুর আবাদ। খামারের চারপাশে রয়েছে কাঁঠাল, খেজুর ও নারকেলগাছ।

ওসমান গনী ২০১৯ সালে পারিবারিক ১ একর ৩০ শতাংশ জমিতে ১০টি ছাগল দিয়ে একটি খামার দেন। করোনার সময় নানা অনিশ্চয়তায় তিনি চাকরি ছেড়ে বাড়ি ফিরে আসেন। সে বছরই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে ১২টি গরু নিয়ে মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় হাত দেন, সফলতাও পান। পরের বছর বিদেশি জাতের চারটি দুধের গরু কেনেন। শুরু হয় পুরোদমে তাঁর খামারি জীবন।

ওসমান গনী বলেন, দুধের গরু না বাড়িয়ে তিনি দেশি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাইয়ে গরু মোটাতাজাকরণ, মাংস প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি ও কেঁচো সার উৎপাদনের কাজে হাত দেন।

মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ প্ল্যান্ট নির্মাণের আশা ব্যক্ত করে ওসমান গনী বলেন, ভোলা শহরের টাউন স্কুল মাঠের সামনে তাঁর মালিকানাধীন মাংস বিক্রির একটি দোকান আছে। মানসম্মত মাংসের জন্য এর সুনাম আছে। তিনি গরু কিনে সঙ্গে সঙ্গে জবাই না করে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করেন। রোগবালাই থাকলে রোগমুক্ত ও স্বাস্থ্যবান করার পর গরু বিক্রি করেন তিনি। বিয়ে, খতনাসহ বড় বড় অনুষ্ঠানে মাংস সরবরাহ করেন। মাংস বিক্রির এ ব্যবসা বড় পরিসরে করার জন্য তিনি একটি মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ প্ল্যান্ট নির্মাণ করতে চাইছেন।

২০২১ সালে ওসমান গনী কেঁচো সার উৎপাদনের প্রশিক্ষণ নেন। প্রথমে দুটি চেম্বার দিয়ে শুরু করলেও এখন তিনি ৭০টি চেম্বারে সার উৎপাদন করছেন

২০২১ সালে ওসমান গনী কেঁচো সার উৎপাদনের প্রশিক্ষণ নেন। প্রথমে দুটি চেম্বার দিয়ে শুরু করলেও এখন তিনি ৭০টি চেম্বারে সার উৎপাদন  ২০২১ সালে ওসমান গনী কেঁচো সার উৎপাদনের প্রশিক্ষণ নেন। প্রথমে দুটি চেম্বার দিয়ে শুরু করলেও এখন তিনি ৭০টি চেম্বারে সার উৎপাদন করছেন। তিনি বলেন, তাঁর খামারের গরু–ছাগলের গোবর, পচা ঘাস, লতাপাতা ও শাকসবজির উচ্ছিষ্ট দিয়ে শুরু করেন কেঁচো সার উৎপাদন। বর্তমানে মাসে ছয় মেট্রিক টন কেঁচো সার উৎপাদিত হয়।

এ ছাড়া আরও ১০ ‘কন্ট্র্যাক্ট ফার্মারের’ কাছ থেকে মাসে পাঁচ মেট্রিক টন সার পান তিনি। এসব সার ১ কেজি, ৫, ১০, ২৫ ও ৫০ কেজির প্যাকেট করে বাজারজাত করেন। প্রতি কেজি সারের পাইকারি মূল্য নেন ১৩ থেকে ১৫ টাকা। আর খুচরা বিক্রি করেন ২০ টাকায়। ওসমান মাসে খরচ বাদে কেঁচো সার বিক্রি বাবদ প্রায় ৬০ হাজার টাকা ও ৪টি গরুর দৈনিক প্রায় ৭৫ কেজি দুধ বিক্রি বাবদ ৬০–৭০ হাজার টাকা আয় করেন।

ওসমান বলেন, দিনে দিনে ভোলায় কেঁচো সারের চাহিদা বাড়ছে। এ সার ব্যবহারের ফলে একদিকে কম খরচে অধিক ফলন হয়, অন্যদিকে দিনে দিনে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। সাধারণ চাষিদের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ সার কিনছে। ভোলা ছাড়াও পটুয়াখালী, পিরোজপুর, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলা থেকে অর্ডার আসে। তাঁর এ খামারে মাসিক ভিত্তিতে তিনজন ও অস্থায়ীভাবে ১৫-২০ জন কাজ করেন।

আয় ও মূলধন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওসমান বলেন, পারিবারিক জমি, লিজ জমি, গরু, অবকাঠামো, কেঁচো, সার, ঘর, কসাইখানা ইত্যাদি বাবদ এখন তাঁর মোট মূলধন ২০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। স্থায়ী তিন শ্রমিকের মাসিক বেতন প্রায় ৫০ হাজার টাকা। সার, দুধ ও মাংস উৎপাদনে খামার ও কসাইখানায় শ্রমিকদের বেতনসহ মাসে মোট খরচ হয় ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা। দুধ ও কেঁচো সার বিক্রি করে খরচ বাদে মাসে তাঁর আয় প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। মাংস অনিয়িমতভাবে বিক্রি হয়, ফলে এর আয়টা বছরে হিসাব করেন ওসমান। সার, দুধ ও মাংস বিক্রি করে খরচ বাদে বছরে তাঁর মোট আয় প্রায় ২০ লাখ টাকা। আয় আরও বাড়াতে এ বছরই দুধের ৫টি গরু ও ৫০টি কেঁচো সারের চেম্বার বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন।

ভোলা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘আমি বেশ কয়েকবার ঐকতান অ্যাগ্রোয় গিয়েছি। এর পরিচালক ওসমান গনী একজন প্রকৌশলী ও ভালো মানের উদ্যোক্তা। তাঁর এ উদ্যোগে সদর উপজেলার মানসম্পন্ন জৈব সারের চাহিদা পূরণ হবে বলে আশা করছি। তাঁকে উচ্চতর প্রশিক্ষণেও পাঠিয়েছি। তাঁর সার মৃত্তিকা ও বিএসটিআইয়ের সনদ অর্জন করেছে। সারের মান ভালো হওয়ায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সব প্রদর্শনীতে তাঁর সার পাঠাচ্ছে।’


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর