সোমবার, ১৯শে মে ২০২৫, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল dailyvobnews@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • পলিথিনের বিকল্প হিসেবে কাপড় ও পাটের ব্যাগ ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে
  • ঘরোয়া চিকিৎসায় থাইরয়েড থাকবে নিয়ন্ত্রণে—জানুন সহজ উপায়
  • শান্তির দূত কে হবেন, পুতিন নাকি ট্রাম্প
  • এখন ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করা যাবে চীনে
  • দেশে খাদ্যের কোন ঘাটতি নেই
  • চাকরি হারালেন বছরে ১.২৮ কোটি টাকা আয় করা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, শঙ্কা জানালেন এআই-র ভবিষ্যৎ দখল নিয়ে
  • অবৈধ রায়ের মাধ্যমে মেয়র হওয়ার শখ কেন
  • আমদানি নীতি পরিবর্তনে কর্মসংস্থান হারানোর ভয় ভারতীয়দের
  • ইন্দোনেশিয়ায় সোনার খনিতে ভূমিধস, নিখোঁজ ১৯
  • সপ্তম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় শাকিলের

কুমিল্লায় কোরবানির চাহিদার চেয়ে পশু উৎপাদন বেশি

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত:
১৮ মে ২০২৫, ১৪:৩৭

আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষ্যে এবার কুমিল্লায় চাহিদার চেয়ে ২৩ হাজার ১৬৬টি কোরবানির পশু বেশি রয়েছে। এতে ১৭ উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত পশু পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতেও সরবরাহ করা যাবে। তবে ভারত সীমান্তবর্তী কুমিল্লা জেলা হওয়ায় খামারি ও গৃহস্থরা পশুর ন্যায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।

তারা বলছেন, কোরবানির হাট শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগ থেকে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পশু অনুপ্রবেশ করান এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা।

যার কারণে খামারিদের পড়তে হয় লোকসানের মুখে। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা বলছেন, এবার কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় পশু চোরাইভাবে যাতে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য সীমান্তে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন তারা।

কুমিল্লা জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র মতে, এ বছর কুমিল্লার ১৭ উপজেলায় কোরবানির জন্য দুই লাখ ৬০ হাজার ৭৫২টি গবাদি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে এক লাখ ৯১ হাজার ৮২টি গরু, ৬০৮টি মহিষ, ৫৬ হাজার ৯৪০টি ছাগল, ১১ হাজার ৮০৫টি ভেড়া ও অন্যান্য পশু ৩১৭টি।

এর মধ্যে জেলা জুড়ে কোরবানির চাহিদা রয়েছে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮৬টি পশু। সেই হিসেবে চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত ২৩ হাজার ১৬৬টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।

উপজেলা অনুসারে আদর্শ সদর উপজেলায় ১৬ হাজার ৭৬৩টি পশু, সদর দক্ষিণে ৯ হাজার ৬৪৯টি, চৌদ্দগ্রামে ১৩ হাজার ৩৯৯টি, নাঙ্গলকোটে ২৭ হাজার ১৭৪ টি, লাকসামে ৩৩ হাজার ৮৬৭ টি, বরুড়ায় ২৩ হাজার ১২টি, চান্দিনায় ১৫ হাজার ২১০টি, মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ১১ হাজার ৯১১টি, লালমাই উপজেলায় ১৯ হাজার ২৩৮টি, দাউদকান্দিতে ৯ হাজার ২৫০টি, দেবিদ্বারে ১৪ হাজার ৮৪২টি, মুরাদনগরে ১৯ হাজার ৪৯টি, বুড়িচংয়ে ৯ হাজার ৬৬৪টি, ব্রাহ্মণপাড়ায় ৮ হাজার ৭৬৪টি, হোমনায় ১৩ হাজার ৩৬২টি, মেঘনায় ৮ হাজার ৭২৭টি ও তিতাস উপজেলায় ৬ হাজার ৮৭১টি কোরবানির পশু রয়েছে।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার দিশাবন্দ গ্রামের রামিশা ক্যাটেল ফার্মের পরিচালক সবুর আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এবার বেশ কয়েকটি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে।

বেশিরভাগ গরুই বড় আকৃতির। গায়ের রঙ দেখতে চমৎকার। গরু দেখা মাত্রই যেকোনো ক্রেতার পছন্দ হবে। আমার এ ফার্মে সর্বোচ্চ চার লাখ টাকা মূল্যের গরু রয়েছে। ভারত থেকে অবৈধ পথে বাংলাদেশে গরু না আসলে এবার খামারিরা লাভবান হবেন।

কুমিল্লা নগরীর কালিয়াজুরি এলাকার নূরজাহান এগ্রোর স্বত্তাধিকারী মনির হোসেন বলেন, ‘এবার আমার খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৫৮টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি কোরবানির জন্য বিক্রি হয়েছে। আমার খামারে ৮ লাখ টাকা দামের গরুর একটি বস গরু রয়েছে। এর ওজন হবে প্রায় ১ টন। খাদ্যের দাম সহনীয় থাকায় গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম কিছুটা কম।

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মাসকরা এলাকার আবদুর রশিদ বলেন, ‘গত বছর কুমিল্লার বাজারে ভারতীয় গুরু আসার কারণে ব্যবসায় লোকসান হয়েছে। এবার ঘরোয়াভাবে কয়েকটি গরু লালন-পালন করেছি। শুনেছি বিজিবি সীমান্তে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। শেষ পর্যন্ত এই ভাবে থাকলে দেশি গরুর কদর বাড়বে এবং আমরাও ন্যায্যমূল্য পাব।’

কুমিল্লা নগরীর চর্থ এলাকার খামারি মারুফ বলেন, ‘লাভের স্বপ্ন দেখে আমরা একটি বছর গরু-ছাগল পালন করে থাকি। চোখের সামনেই সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় চোরাই পথে আসা ভারতীয় গরু দেখে। আমরা চাই ভারতীয় পশু যেন কুমিল্লায় প্রবেশ করেত না পারে সেই লক্ষ্যে প্রশাসন তৎপর থাকবেন। এতে করে দেশের টাকা দেশেই থাকবে লাভবান হবে খামারিরা।’

এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কুমিল্লার ১৭ উপজেলায় ছোট-বড় সব মিলিয়ে ৩৬ হাজার খামারি রয়েছেন। তাদের খামারের মোটা-তাজা করা পশুসহ জেলায় কোরবানির চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত ২৩ হাজার ১৬৬টি পশু রয়েছে। ফলে উদ্বৃত্ত এসব পশু জেলার চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের জেলায়ও বিক্রি করে যাবে। সব মিলিয়ে বলতে পারি এবার কুমিল্লায় কোরবানির পশুর সংকট হবে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘কুমিল্লা সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় ভারত থেকে অবৈধভাবে যাতে কোনো পশু আসতে না পারে সেজন্য আমরা বিজিবি, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনসহ সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করছি।’

কুমিল্লা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন বলেন, ‘কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অবৈধ পথে ভারত থেকে যাতে দেশে পশু আসতে না পারে, সেজন্য বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আমরা সমন্বয় করে কাজ শুরু করেছি। এ ছাড়াও পশুবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি ও হয়রানি যাতে না হয় সেই দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হবে।’

কুমিল্লা ১০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মীর আলী এজাজ বলেন, ‘কুমিল্লা সীমান্ত এলাকা দিয়ে এখন ভারতীয় গরু আসছে না বললেই চলে। তার কারণ বেশিরভাগ সীমান্ত এলাকায় কাটা তারের বেড়া দেওয়া আছে। এরপরও শাহপুর ও শিবের বাজার সীমান্ত এই দুইটি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই এলাকায় বিজিবি সদস্যরা নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। এবার অন্তত চোরাই পথে কুমিল্লার অংশে ভারতীয় পশু প্রবেশ করতে না পারবে না, সেজন্য আমরা জিরো টলারেন্সে আছি।’

 


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর