শনিবার, ৩১শে মে ২০২৫, ১৭ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল dailyvobnews@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • শুরু হচ্ছে নতুন স্মার্ট এনআইডি কার্ড বিতরণ, কিভাবে পাবেন স্মার্ট কার্ড?
  • নোয়াখালীতে ঘরে ঢুকে নারীকে জবাই করে হত্যা, লাশ পুকুরে
  • ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে কানাডা, ম্যানিটোবায় জরুরি অবস্থা জারি
  • আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য হার্ভার্ডের বিকল্প গন্তব্য
  • ভারতের দাসত্ব করবে না বাংলাদেশ, প্রয়োজন হলে জীবন দেবো
  • জেনে নিন মাথায় নতুন চুল গজানোর দুর্দান্ত উপায়
  • ইশরাকের শপথ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন
  • দুর্ভোগ চরমে মাত্র তিন মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছেন ২৬ হাজার গ্রাহক
  • নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তাল সাগর, বন্দরে ৩ নম্বর সংকেত
  • এটিএম আজহারের খালাস উদযাপন করায় এনসিপিকে বর্জনের ঘোষণা

মোদি-এরদোয়ানের মধ্যে তুলনা হচ্ছে কেন

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত:
১৮ মে ২০২৫, ১৩:৪২

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ানের জন্য চলতি সপ্তাহটা বলতে গেলে দারুন ছিল। তুরস্কে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে যুক্ত কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) নিজেদের ভেঙে দিয়েছে। সেই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের আরও ঘনিষ্ট হতে থাকা দেশ সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি আলোচনা তুরস্কতেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। নতুন পোপ শিগগিরই সেই দেশ সফর করতে চলেছেন বলে ঘোষণা করেছেন।

শুধু তাই নয়, তুরস্ক সমর্থিত লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা আরও মজবুত হয়েছে। পাশাপাশি ভারতের বিরুদ্ধে সাহায্যের জন্য এরদোয়ানকে ধন্যবাদ জানিয়েছে পাকিস্তান।

অন্যদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য গত দুই সপ্তাহ ছিল 'চ্যালেঞ্জিং'। গত ২২ এপ্রিল পেহেলগাম হামলার পর ৬ ও ৭ মে-র মধ্যবর্তী রাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেয় ভারত। এরপর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়ে এবং হামলা ও পাল্টা হামলা চলতে থাকে।তারপর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার সময় তার কৃতিত্ব নেয় যুক্তরাষ্ট্র।

ভারত ও পাকিস্তানের সংঘর্ষে তুরস্ক প্রকাশ্যে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এই আবহে তুরস্ককে নিয়ে ভারতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল বিতর্ক চলছে। আবার ভারত দাবি করেছে, পাকিস্তান যেসব ড্রোন হামলা চালিয়েছে যেগুলো তুরস্কে নির্মিত।

পাক এরদোয়ান

ভারত-পাকিস্তান সংঘ্ষের মধ্যে প্রকাশ্যে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এ নিয়ে ভারতীয়দের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুরস্কের বিরুদ্ধে বয়কটের ডাক ওঠে। রাজনৈতিক নেতারাও এর প্রতিধ্বনি তোলেন।

গত বৃহস্পতিবার ভারত জাতীয় নিরাপত্তার উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে তুর্কি সংস্থা সেলেবিকে তাদের বিমানবন্দরে কার্যক্রম পরিচালনা করতে নিষেধ করেছে, যদিও এই অভিযোগ কোম্পানিটি অস্বীকার করেছে।

এ ছাড়া জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া এবং মাওলানা আজাদ ন্যাশনাল উর্দু ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তুর্কি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একাডেমিক সম্পর্ক স্থগিত করেছে। তবে ভারতের এসব সিদ্ধান্তে এরদোয়ানের 'বিশেষ ভ্রূক্ষেপ' নেই বলেই মনে হচ্ছে।

তিনি বৃহস্পতিবার বলেছেন, আমরা পাকিস্তানের জনগণের পাশে আছি। আমি আমার ভাই শেহবাজ শরিফকে ফোন করে বলেছিলাম যে আমরা পাশে আছি। আমরা পাকিস্তানের পাশে থাকব।

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের 'সেন্টার ফর ওয়েস্ট এশিয়া স্টাডিজ'-এর অধ্যাপক অশ্বিনী মহাপাত্র মনে করেন, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের আত্মবিশ্বাস বাড়ার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে।

অধ্যাপক মহাপাত্র বলেছেন, সিরিয়া ও লিবিয়ায় নিজের পছন্দের সরকার প্রতিষ্ঠা করিয়েছেন এরদোয়ান। আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে আজারবাইজানকে জিতিয়েছেন। ট্রাম্পও সিরিয়া সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেমের মতো গাজাও ফিলিস্তিনিদের: এরদোয়ানপশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেমের মতো গাজাও ফিলিস্তিনিদের: এরদোয়ান
এমন পরিস্থিতিতে, তিনি মনে করছেন যে পশ্চিম এশিয়ার মতো দক্ষিণ এশিয়াতেও ইচ্ছেমতো কাজ করে যেতে পারবেন। এরদোয়ান যেভাবে পাকিস্তানকে সমর্থন করছেন, তাতে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়বে বৈকি। তার মতে, দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে সমীকরণ কিন্তু আলাদা।

অধ্যাপক মহাপাত্র বলছেন, তাকে (এরদোয়ানকে) বুঝতে হবে যে দক্ষিণ এশিয়া কিন্তু পশ্চিম এশিয়ার মতো নয়। ইসলামের নামে দক্ষিণ এশিয়ার পাকিস্তানের কাছে নিজেকে প্রাসঙ্গিক করে তুলতে পারেন এরদোয়ান, কিন্তু অন্যত্র কোথাও এমনটা হবে না।

'ভারতের উচিত তুরস্কের বিষয়ে কূটনৈতিকভাবে আরও সক্রিয় হওয়া। যেমন, আর্মেনিয়া ও গ্রিসের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করা। সাইপ্রাসের প্রতি সমর্থন বাড়ানো এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকেও মোকাবিলা করা।'

তুরস্ক কখনোই ভারতের সঙ্গে ছিল না, কিন্তু এখন এরদোয়ান ইসলামের নামে ভারতবিরোধী প্রচার চালাচ্ছেন, বলেন অধ্যাপক মহাপাত্র। প্রধানমন্ত্রী মোদি ও প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের 'তুলনা'

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের মধ্যে প্রায়শই তুলনা করা হয়। দু'জনের রাজনীতি ও ব্যক্তিত্বের বিশ্লেষণে অনেক মিল রয়েছে বলেও মনে করা হয়।

এরদোয়ান ১৯৯৪ সালে ইস্তাম্বুলের মেয়র হন। ২০০৩ সালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন এবং টানা তিন মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৪ সালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট পদে আসেন।

অন্যদিকে, নরেন্দ্র মোদি ২০০১ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হন এবং এবং ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। মোদি ২০২০ সালের আগস্ট মাসে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় বলেছিলেন শতাব্দীর অপেক্ষার অবসান হয়েছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ইস্তাম্বুলের আয়া সোফিয়াকে জাদুঘর থেকে মসজিদে রূপান্তরিত করেন। সময়টা ছিল ২০২০ সালের জুলাই মাস। সেই সময় তাকে বলে শোনা গিয়েছিল, আমাদের যুবসম্প্রদায়ের কাছে এটা একটা বড় স্বপ্ন ছিল যা এখন পূর্ণ হয়েছে।

নরেন্দ্র মোদি হিন্দু জাতীয়তাবাদী হিসেবে বিবেচিত হন এবং এরদোয়ানকে বিবেচনা করা হয় একজন ইসলামি নেতা হিসেবে। এই দুই নেতাকেই সেই রাজনীতির চ্যাম্পিয়ন বলে মনে করা হয়, যে রাজনীতির সঙ্গে ধর্ম অনিবার্যভাবে জড়িয়ে রয়েছে।

এরা দু'জনেই ধর্মনিরপেক্ষ দেশের নেতৃত্ব দিলেও তারা চান রাষ্ট্র ও জাতিগতভাবে ধর্মের একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থান থাকুক।

এরদোয়ান তুরস্কের নাম পরিবর্তন করে 'তুর্কিয়ে' রেখেছেন এবং বিজেপির নরেন্দ্র মোদিও তার দেশের ইন্ডিয়ার নামটির পরিবর্তে ভারত ব্যবহার করতে চান।

তুরস্কের হাইয়া সোফিয়া জাদুঘর আসলে একটা গির্জা ছিল। ষষ্ঠ শতাব্দীতে বাইজেন্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ান ওই গির্জা নির্মাণ করেন। অটোমান বা উসমানীয় সাম্রাজ্যের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে ১৪৫৩ সালে সেটি মসজিদে রূপান্তরিত হয়।

উসমানীয় সাম্রাজ্যের অবসানের পর মোস্তফা কামাল পাশা ক্ষমতায় আসেন। তিনি ১৯৩৪ সালে ওই মসজিদকে জাদুঘরে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেন।

তার এই পদক্ষেপের মাধ্যমে মোস্তফা কামাল পাশা ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্ককে একটা বিশেষ বার্তা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এরদোয়ান ওই জাদুঘরকে আবার মসজিদে রূপান্তরিত করেন। তার ক্ষমতায় আসার ১৭তম বছরে এসে এই লক্ষ্য অর্জন করেন এরদোয়ান।

অন্যদিকে, নরেন্দ্র মোদির কথা বলতে গেলে, তিনি নব্বইয়ের দশকে রাম জন্মভূমি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই আন্দোলনের পর অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়। পরে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সেখানে রাম মন্দির নির্মাণ হয়েছে।

মোদি ও এরদোয়ানের অতীত

প্রবীণ কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শশী থারুর বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে মোদি সরকারের নীতিকে সমর্থন করলেও, ২০১৮ সালে তিনি নরেন্দ্র মোদি ও এরদোয়ানের মধ্যে 'সামঞ্জস্যের' বিষয়ে একটা প্রতিবেদন লিখেছিলেন। 'প্রজেক্ট সিন্ডিকেট'-এ সেই বছরের ৭ জুন প্রকাশিত হয়েছিল ওই প্রতিবেদন।

সেই প্রতিবেদনে শশী থারুর লিখেছিলেন, মোদি ও এরদোয়ান দু'জনেই ছোট শহরের দরিদ্র অবস্থা থেকে উঠে এসেছেন। তুরস্কের রাইজ শহরে একসময় লেবুর শরবত ও পেস্ট্রি বিক্রি করেছেন এরদোয়ান।

অন্যদিকে, ভাদনগরের রেল স্টেশনে বাবা ও ভাইকে চায়ের দোকান চালাতে সাহায্য করতেন মোদি। তারা দু'জনেই নিজেই নিজের রাস্তা গড়েছেন, উদ্যমী এবং শারীরিকভাবে ফিট। নেতা হওয়ার আগে এরদোয়ান পেশাদার ফুটবলার ছিলেন, অন্যদিকে মোদি তার ৫৬ ইঞ্চি ছাতি নিয়ে গর্ব বোধ করেন। দুই নেতার মধ্যে অন্য সামঞ্জস্যের কথাও উল্লেখ করেছিলেন শশী থারুর।

তিনি লিখেছেন, এরদোয়ানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) এবং নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) উভয়ই ধর্মীয় ভাবনাকে উৎসাহ দেয়। দুই দলই জাতীয়তাবাদকে ধর্মের সঙ্গে যুক্ত করে এবং যুক্তি দেয় যে তাদের নিজেদের প্রাচীন ব্যবস্থা পশ্চিমা-অনুপ্রাণিত ধর্মনিরপেক্ষ মতাদর্শের চেয়ে ভালো।

'এরদোয়ান এবং মোদি দু'জনেই অতীতের কথা তুলে ধরেন। এরদোয়ান উসমানিয় সাম্রাজ্যের প্রশংসা করে তার ভোটারদের বলেন যে আপনারা শুধু একজন প্রেসিডেন্টকেই নির্বাচন করছেন না, দেশের পরবর্তী শতাব্দীর বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। অন্যদিকে মোদি প্রাচীন ভারতের কথা তুলে ধরেন এবং তাকে পুনরুজ্জীবিত করে পুরানো গৌরব ফিরে পেতে চান।'

দুই নেতার মধ্যে মিলের প্রসঙ্গে শশী থারুর তুরস্কের বিশ্লেষক সোনের চাপতাইয়ের একটা মন্তব্য উদ্ধৃত করেছেন।

সেখানে তিনি বলেছেন, তুরস্কের অর্ধেক মানুষ এরদোয়ানকে ঘৃণা করে এবং মনে করে যে তিনি কিছুই সঠিকভাবে করতে পারবেন না। আবার তুরস্কের অর্ধেক মানুষ তাকে ভালোবাসে এবং মনে করে এরদোয়ান কোনো ভুল করতে পারেন না।

থারুর মনে করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। দুই দেশের মধ্যে পার্থক্যের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি।

থারুর লিখেছেন, অবশ্যই তুরস্ক ও ভারতের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। তুরস্কের জনসংখ্যা আট কোটি ১০ লাখ, যা ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও কম। তুরস্কে ৯৮ শতাংশ মুসলমান আর ভারতে ৮০ শতাংশ হিন্দু। দেশভাগের পর পাকিস্তান গঠিত হয় এবং এরদোয়ান সেই পাকিস্তানের পাশেই দাঁড়িয়েছেন।

'আগে ধর্ম'

নিউইয়র্ক টাইমস-এর সাবেক ইন্টারন্যাশনাল ওপিনিয়ন এডিটর বাশারত পীর কাশ্মীরের বাসিন্দা। তিনি এরদোয়ান ও মোদির রাজনীতির তুলনা করে ২০১৭ সালে 'এ কোয়েশ্চেন অফ অর্ডার: ইন্ডিয়া, টার্কি অ্যান্ড দ্য রিটার্ন অব স্ট্রংম্যান' নামে একটা বই লিখেছিলেন।

তার বইয়ে বাশারত পীর ব্যাখ্যা করেছেন তুরস্ক ও ভারতের মতো বহু-সাংস্কৃতিক গণতন্ত্রে কীভাবে এরদোয়ান ও নরেন্দ্র মোদির মতো ডানপন্থি ধর্মভিত্তিক জাতিয়তাবাদী নেতারা সাফল্য পেয়েছেন।

তার লেখা বই সম্পর্কে ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাশারাত পীর বলেছিলেন, সাম্রাজ্যের পতনের পর তুরস্ক ও ভারত দুই দেশই নেশন-স্টেট (জাতিরাষ্ট্র) হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দুই দেশেই জাতিগত দিক থেকে বৈচিত্র্যময় সমাজ রয়েছে।

'উভয় দেশের শীর্ষ নেতারা পাশ্চাত্যে আধুনিকতার দিকে ঝুঁকেছিলেন এবং ব্যাপক পর্যায়ে সামাজিক সংস্কার সাধন করেছিলেন। মোস্তফা কামাল পাশা তুরস্ককে ফ্রান্সের ধর্মনিরপেক্ষতার দিকে নিয়ে যাওয়া চেষ্টা করেছিলেন।'

এই প্রসঙ্গে, প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।

বাশারাত পীর বলেছিলেন, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু একটা ভিন্ন ধরনের ধর্মনিরপেক্ষতা প্রচার করেছিলেন যা ধর্মের বিরুদ্ধে ছিল না বরং তিনি এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছিলেন যে ধর্ম থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে রাষ্ট্র।

'তুরস্কে মোস্তফা কামাল পাশা এবং ভারতে নেহেরুর আদর্শ কয়েক দশক ধরে আধিপত্য বিস্তার করেছিল, কিন্তু দুই দেশেই এমন গোষ্ঠীও ছিল যারা ধর্মের প্রতি পাশা এবং নেহেরুর দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা করে। তুরস্কের ইসলামপন্থিরা এই বিরোধিতা করে এবং ভারতে বিরোধিতা জানায় হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা।'

বাশারাত পীর তার বইয়ে আরও লিখেছেন, এরদোয়ানের ইসলামি জাতীয়তাবাদ এবং মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদে তাদের জন্য খুব কমই জায়গা রয়েছে যারা তাদের (প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও প্রধানমন্ত্রী মোদির) বিশ্বাসের সঙ্গে যোগ রাখেন না। তাদের রাজনীতিতে দ্বিমত পোষণের জায়গা খুবই কম।

নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের অনেক দেশ সফর করলেও সে সময় তুরস্ক যাননি। জি-২০ সম্মেলনে ২০১৫ সালে সে দেশে গিয়েছিলেন। তবে ২০১৯ সালে মোদির তুরস্ক সফরের কথা থাকলেও কাশ্মীর নিয়ে এরদোয়ানের বিবৃতির কারণে তা স্থগিত করা হয়।

এরদোয়ান ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল ভারতে দ্বিপক্ষীয় সফর করেছিলেন। সেই সময়ও কাশ্মীর নিয়ে তার এক মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। ভারত সফরের আগে কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে চেয়েছিলেন এরদোয়ান।

প্রথমবার তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ২০০৩ সালে নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মি. এরদোয়ান বলেন, যেকোনো কিছুর আগে আমি একজন মুসলমান। একজন মুসলিম হিসেবে আমি আমার ধর্ম পালন করি। আল্লাহর কাছে আমার একটা দায়িত্ব আছে। এজন্যই আমি আছি। আমি সেই দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছি।- বিবিসি


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর