প্রকাশিত:
১৭ মে ২০২৫, ১৫:২৫
বিজ্ঞানীরা চুলের ফলিকলে থাকা একটি উপেক্ষিত স্টেম সেল গোষ্ঠী শনাক্ত করেছেন, যা টাক বা চুল পড়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষের জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিটি ফলিকলের একটি ওপরের অংশ রয়েছে, যেটি চুল গজানোর নীরব ও সক্রিয় পর্যায়ের মধ্যে জৈবিক সুইচ হিসেবে কাজ করে।
গবেষণা ও সম্ভাবনা
ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার স্কুল অব মেডিসিনের লু কিউ. লে, এমডি, পিএইচডি এবং তাঁর সহকর্মীরা এই গবেষণা চালান—জানার জন্য যে ভুলে যাওয়া এই সেলগুলো কীভাবে চুল গজানোর জন্য নিষ্ক্রিয় ফলিকলগুলোকে আবার সক্রিয় করতে পারে।
তাঁদের মতে, এই আবিষ্কার চুল পড়া রোধে নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির পথ খুলে দিতে পারে। তবে তাঁরা সতর্ক করেছেন, চূড়ান্ত চিকিৎসা পদ্ধতি জনসাধারণের কাছে পৌঁছাতে এখনো আরও বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
চুল গজানোর স্টেম সেল ট্রিগার
এই নতুনভাবে চিহ্নিত কোষগুচ্ছটি ফলিকলের মধ্য ও ওপরের অংশে অবস্থান করে। গবেষকদের মতে, এই সেলগুলো নিজেদের পুনর্গঠন করতে পারে এবং নতুন চুল তৈরিতে বিশেষায়িত সেল তৈরি করে।
গবেষণাগারে দেখা গেছে, এই সেলগুলো সরিয়ে দিলে পুরনো চুল পড়ে গেলেও নতুন চুল গজানোর প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ
অনেকে মনে করেন চুল পাতলা হওয়া বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অনিবার্য। কিন্তু এই অনন্য স্টেম সেল গোষ্ঠীর উপস্থিতি চিকিৎসার নতুন দিক উন্মোচন করেছে।
"আমরা আশা করি, একদিন এই স্টেম সেলগুলো চুল পড়ার চিকিৎসায় কার্যকর নতুন পদ্ধতি হিসেবে কাজ করবে," বলেন লে।
চলমান চিকিৎসার সীমাবদ্ধতা
বর্তমানে চুল পড়া রোধে ব্যবহৃত ক্রিম বা ওষুধ সীমিত ধরনের চুল পড়ায় কার্যকর। অনেক ব্যবহারকারী ধীর ফলাফল বা স্থবিরতার সমস্যায় পড়েন।
এই নতুন আবিষ্কার চিকিৎসাবিদদের জন্য নতুন লক্ষ্য নির্ধারণের সুযোগ করে দিচ্ছে—বিশেষ করে ফলিকলের কম আলোচিত অংশগুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে।
টাক মাথার ক্ষেত্রেও সম্ভাবনা
সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো—এই স্টেম সেলগুলো টাক পড়া স্থানেও এখনো বিদ্যমান, যদিও চুলের শিকড় নেই। অর্থাৎ, সমস্যাটা হয়তো কোষ হারানোর নয়, বরং তা আবার সক্রিয় করার বিষয়।
লে'র দল বলছে, মানুষের টাক মাথা থেকে নেওয়া নমুনাতেও এই স্টেম সেলগুলো অক্ষত রয়েছে। সঠিক রাসায়নিক সংকেত বা ওষুধের মাধ্যমে এগুলো আবার চুল গজাতে সক্ষম হতে পারে।
মাউস পরীক্ষার চমকপ্রদ ফলাফল
প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই স্টেম সেল সরিয়ে দিলে মাউসের শরীরে চুল উঠে যায় এবং ফলিকলগুলো এলোমেলোভাবে গঠিত হয়, যা তাদের গঠন বজায় রাখার গুরুত্বও নির্দেশ করে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
গবেষকরা এখন এসব সেল কীভাবে আচরণ করে তা বোঝার জন্য নানা পরীক্ষা চালাচ্ছেন। মাউসে জেনেটিক মার্ক ব্যবহার করে দেখা গেছে, ফলিকলের ওপরের স্টেম সেলগুলো চক্র অনুযায়ী নিচের অংশে চলে যায় এবং নতুন চুল তৈরি করে।
এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এতদিন ফলিকলের ‘বাল্জ’ অংশকে চুল গজানোর মূল উৎস হিসেবে ধরা হতো। এখন মনে হচ্ছে এই নতুন সেলগুচ্ছই সেই বাল্জের মূল সরবরাহকারী।
চুল, স্টেম সেল ও আগামী দিনের আশা
বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষ চুল পড়া নিয়ে মানসিক চাপে ভুগছেন। কারণ হতে পারে মানসিক চাপ, জেনেটিক বা চিকিৎসাজনিত সমস্যা। সব ধরনের সমস্যার একক সমাধান নেই।
তবে গবেষকেরা বলছেন, এই আবিষ্কার নতুন দিক উন্মোচন করেছে। এই মাঝামাঝি ফলিকল অঞ্চলের সেলগুলোকে কেন্দ্র করে নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি উন্নয়নের আশা করছেন তাঁরা।
এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি চুল পড়া সমস্যাকে "গোঁড়া থেকে" মোকাবিলার সুযোগ করে দিচ্ছে এবং আমাদের শরীর কীভাবে টিস্যু পুনর্গঠন করে, সে বিষয়ে নতুন প্রশ্নও তুলছে।
মন্তব্য করুন: