প্রকাশিত:
১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:১০
রাজশাহীতে তালাইমারি শহিদ মিনার এলাকায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় হামলা ও মারধরে মেয়েটির বাবা নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বুধবার রাতে (১৬ এপ্রিল) তার ওপর হামলা হয়। এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েটি বাবার লাশ রেখে আজ বৃহস্পতিবার সকালে পরীক্ষার কেন্দ্রে যায়।
পেশায় বাসচালক নিহত আকরাম আলী (৪৫) নগরের তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকার মৃত আজদার আলীর ছেলে। নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, আকরামের মেয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় কয়েকজন যুবকের দ্বারা উত্ত্যক্তের শিকার হচ্ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার প্রতিবাদ করেন আকরাম হোসেন। একপর্যায়ে উত্ত্যক্তকারীরা আকরামের বাড়িতে গিয়ে তাকে হুমকি দিয়ে আসে।
ওই ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানায় তার ছেলে হাসান ইমাম হত্যা মামলা করেছেন। এতে সাতজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও চার–পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকার কালু মিয়ার ছেলে মো. নান্টু (২৮), মৃত রতন মিয়ার ছেলে মো. বিশাল (২৮), মৃত আবদুস সাত্তারের ছেলে খোকন মিয়া (২৮), মো. শাহীনের ছেলে তাসিন হোসেন (২৫), মো. অমি (২০), মো. নাহিদ (২৫) ও মো. শিশির (২০)।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি আসামি নান্টু তার স্ত্রীকে মারধর করেন। এর প্রতিবাদ করেছিলেন আকরাম। ওই নারী আকরামের স্ত্রীর আত্মীয়। এতে ক্ষিপ্ত হন নান্টু। তিনি আকরামের মেয়ে ও ছেলেকে ক্ষতি করার হুমকি দেন।
এর পর থেকে নান্টু বখাটেদের দিয়ে আকরাম আলীর মেয়ে রাকিয়াকে উত্ত্যক্ত করাতেন। গতকাল নান্টু নিজেই তাকে গালিগালাজ করেন। আকরাম এ বিষয়ে নান্টুর মা–বাবার কাছে নালিশ করেন।
পরে রাত ১০টার দিকে নান্টু ও তার সহযোগীরা নগরের তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় আকরাম ও তার ছেলে হাসান ইমামের ওপর হামলা করেন। ইটের আঘাতে গুরুতর জখম হন আকরাম। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত ১১টার দিকে তিনি সেখানে মারা যান।
নিহত আকরাম আলীর মেয়ে রাকিয়া আলফি এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। আজ ছিল তার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা। রাজশাহী শিরোইল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। সে রাজশাহীর অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বলেন, উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় তাদের শিক্ষার্থী রাকিয়া আলফির বাবাকে মারধর করে মেরে ফেলা হয়েছে। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
নিহত আকরাম আলীর স্ত্রী মুক্তি বেগম বলেন, নান্টু মাঝেমধ্যেই স্ত্রীকে প্রকাশ্যে মারধর করেন। কিছুদিন আগে মারধর করার সময় তার স্বামী ওই গৃহবধূকে রক্ষা করতে যান। এতে নান্টুর গায়ে সামান্য আঘাত লাগে। তখন থেকে সে ক্ষিপ্ত ছিল, মেয়েকে উক্ত্যক্ত করত। এর প্রতিবাদ করায় তার স্বামীকে খুন করা হয়েছে।
মুক্তি বেগম কান্নারত অবস্থায় বলেন, ‘বাবার লাশ রেখে কেউ পরীক্ষা দিতে যেতে চায়? মেয়েটা কান্নাকাটি করে পরীক্ষা দিতে গেল। হত্যাকারীদের যেন ফাঁসি হয়।’
ঘটনার বিষয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক হাসান বলেন, তালাইমারিতে বখাটেদের হামলায় গুরুতর আহত হন আকরাম হোসেন।
রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে একটি মামলা হয়েছে, এরই প্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
মন্তব্য করুন: