শনিবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৫, ৫ই বৈশাখ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল dailyvobnews@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • ঢাকার বাণিজ্য-প্রতিকূল আচরণে ভারতের উদ্বেগ, তবে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ এড়ানোর ইঙ্গিত
  • মেয়েকে উত্যক্তের প্রতিবাদ করায় রাজশাহীতে বখাটেদের হামলায় খুন হলেন বাবা
  • বৈঠকে বসছেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা, রেলপথ ব্লকেড কর্মসূচি শিথিল
  • মুজিবনগর সরকার আমাদের জন্য বীরত্বগাথা অধ্যায়
  • পেঁয়াজের দাম বাড়তে দেয়া হবে না
  • নির্বাচন হলেই গণতন্ত্র হবে এর গ্যারান্টি নেই
  • রাষ্ট্র সংস্কার প্রশ্নে সবার লক্ষ্য এক
  • আনন্দ উল্লাসে শেষ হলো ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’
  • পহেলা বৈশাখ আমাদের সম্প্রীতির অন্যতম প্রতীক
  • ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদে একমত নয় বিএনপি

আরাকান আর্মি বড় ফ্যাক্টর

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত:
৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৩

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজার জনকে ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার। তবে দেশটিতে চলমান সংঘাতের কারণে অনিশ্চয়তার মুখে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে হটিয়ে বাংলাদেশ ঘেঁষা আরাকানের অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান আর্মি। ফলে দেশটির সরকার রাজি থাকলেও আরাকান আর্মিকে পাশ কাটিয়ে এখনই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কৌশলগত কারণে মিয়ানমারের এ অঞ্চলের দিকে চীন-ভারতসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর নজর রয়েছে। তাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ যে কোনো সমঝোতায় যেতে বাংলাদেশকে সব পক্ষের বিষয়গুলো মাথায় রেখে কৌশলী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

চলতি মাসে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউ থান শিউ। বৈঠকে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার তালিকা থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার জনকে ফেরত নেওয়ার ঘোষণা দেয় মিয়ানমার। এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে ব্যাখ্যা করছে অন্তর্বর্তী সরকার।

পাশাপাশি একে দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। আরাকানের ১৭টি শহরের মধ্যে ১৪টিই এখন তাদের দখলে।

বাকি শহরগুলো দখলে নিতে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তারা। রাখাইনের যেসব এলাকায় রোহিঙ্গাদের বসতি, সেগুলো এখন আরাকান আর্মির দখলে। আর আরাকান আর্মি রাখাইন এলাকা দখলের পর গত আট মাসে প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরাকান আর্মির সম্পর্ক ভালো নয়। ফলে মিয়ানমার সরকার চাইলেও আরাকান আর্মিকে এড়িয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আরাকান আর্মির কাছে এলাকা হারিয়ে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার নানা কৌশল নিয়েছে। গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত জান্তা সরকারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে হঠাৎ এমন আন্তরিকতা সরলভাবে দেখার সুযোগ নেই। আরাকান আর্মিকে রুখতে দেশটি বাংলাদেশকে পাশে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে এমন অবস্থান নিয়েছে কি না সেটা ভাবতে হবে।

তাছাড়া রাখাইনের সিত্তে বা আকিয়াব বন্দরে চীনসহ বিভিন্ন পক্ষের স্বার্থ জড়িত। বঙ্গোপসাগর ঘেঁষা মিয়ানমারের এ রাজ্যটির দিকে ভারতও সার্বক্ষণিকভাবে তীক্ষè নজর রাখছে। ফলে এখানে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ যে কোনো সমঝোতায় যেতে বাংলাদেশকে সব পক্ষের বিষয়গুলো মাথায় রেখে কৌশলী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এম শহীদুজ্জামান বলেন, এ ধরনের ঘোষণা এর আগেও মিয়ানমারের সরকার দিয়েছে। কিন্তু ফেরত নেওয়াটা একেবারেই অসম্ভব। কেননা রোহিঙ্গারা যে অঞ্চলে যাবে, সেখানে তাদের উপস্থিতি একেবারেই সীমিত। ওখানে আরাকান আর্মি যতদিন রয়েছে, ততদিন ১ লাখ ৮০ হাজার নিতে চাওয়া বা ৩ লাখ নিতে চাওয়া, এটা পুরোপুরি অর্থহীন। তারা কল্পনাপ্রসূত এসব কথা বলে।

ইয়াঙ্গুনের ওপর তাদের যে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, সেটা বিশ্বাসযোগ্য করার জন্যই তারা এ ধারণা দিয়েছে। এদিকে আরাকানে স্থিতিশীল পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উচ্চপ্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান।

গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আরাকানে চলমান যুদ্ধাবস্থার নিরসন না করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। যুদ্ধাবস্থা পরিস্থিতি নিরসনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে।

আরাকানে যাতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা দ্রুত ফিরে আসে এবং সেখানকার মানবিক সংকট যাতে নিরসন হয় এজন্য আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কাজ করছি। আমরা চেষ্টা করছি, সেখানকার হিউম্যানিটারিয়ান সিচুয়েশন যাতে আমরা কিছুটা হলেও নিরসন করতে পারি। সে জন্য দরকার বিবদমান দুই পক্ষের যুদ্ধের বিরতি।

খলিলুর রহমান আরও বলেন, যে কোনো প্রত্যাবাসনের একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। তারা যাবেন, কী করে যাবেন, সেই জায়গাটা কী অবস্থায় আছে, নিরাপত্তা-সুরক্ষা আছে কিনা এবং যাওয়ার জন্য জীবন-জীবিকার সংস্থান আছে কিনা- এ বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।

এজন্য আমরা সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। এই প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের কাছ থেকে ভেরিফিকেশন নিতে হচ্ছে। কেননা রাখাইন এখনো মিয়ানমারের একটি সার্বভৌম অঞ্চল। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনা করেছি। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া আরাকান আর্মির একটি প্রিন্সিপাল পজিশন। আমাদের সঙ্গে আলোচনার সময় দ্ব্যর্থহীনভাবে সেই কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন।

তিনি বলেন, এই ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করতে পারব। তবে সেটা কালকেই হচ্ছে না। তারা যাতে দ্রুততম সময়ে যেতে পারেন, আমাদের সেই প্রচেষ্টা থাকবে। সে কারণে মিয়ানমার, আরাকানের বাস্তব কর্তৃপক্ষ, জাতিসংঘ ও আমাদের বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে মিলে আমরা কাজটি করব। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন যে, আগামী ঈদ যাতে রোহিঙ্গারা তাদের দেশে গিয়ে করতে পারে- সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

 


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর