প্রকাশিত:
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:২১
বিডিআর হত্যাকান্ডের তথ্য জেনে যাওয়ায় হত্যা করা হয় ক্যাপ্টেন রাজিব কে। পরবর্তীতে তৎকালীন প্রশাসন এই হত্যাকান্ডকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে। নির্যাতনের সময় রাজিবের ফোন থেকে বাসায় ফোন আসে, যাতে স্পষ্ট বোঝায় যায় তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে। অথচ রাজিবের বাসা থেকে নিহত হওয়ার হোটেল হাটা দুরত্বে ১০ মিনিটের রাস্তা হলেও ১৫ মিনিট পরেই বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট থেকে কল করে জানানো হয় যে রাজিব আর এই দুনিয়াতে নেই, যা রহস্যজনক। বর্তমান সরকারের কাছে প্রকৃত ঘটনার রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছে নিহতের পরিবার।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিহতের পরিবারের পক্ষে তার বড় মামা অধ্যাপক মো: শফিকুল ইসলাম এই দাবি জানান।
বিডিআর হত্যাকান্ডের সঙ্গে ক্যাপ্টেন রাজিবুল হক হত্যার সম্পর্ক আছে জানিয়ে অধ্যাপক মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারি পিলখানায় ঘটে যাওয়া পরিকল্পিত মর্মান্তিক বিডিআর হত্যাকান্ড এবং ক্যাপ্টেন রাজীব হত্যাকান্ড একই সূত্রে গাঁথা। যারা পিলখানায় হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল তারাই উক্ত হত্যাকান্ডের সত্য ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার অংশ হিসেবে ক্যাপ্টেন রাজীবকে হত্যা করে তার মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছিল। এই হত্যাকান্ডের পেছনে হানি ট্রাপ ব্যবহার করা হয়েছিল বলে তারা আশংঙ্কা করেন।
ঘটনার সূত্রে তারা আরো জানান, ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে ক্যাপ্টেন রাজিব তার মা কে জানায় একটা ঘটনার সঙ্গে তাকে জড়িয়ে ফেলা হয়েছে কিন্তু সে কোনো অন্যায় কিছু করেনি। তিন-চার জন মিলে তাকে একটি বিষয়ে ফাসিয়ে দিয়েছে। ঘটনার কারণ সে জানায়নি। এটা খুবই গোপনীয় বিষয় এবং এ বিষয়ে দ্রুতসময়ের মধ্যেই তদন্ত হতে পারে। তাই তাকে এর মধ্যেই দেশ ত্যাগ করতে হবে।
এই কথোপকথোনের ঠিক ৬ মাস পর ২০০৯ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারি পিলখানায় মর্মান্তিক বিডিআর হত্যাকা- ঘটে উল্লেখ করে অধ্যাপক মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, এই হত্যাকা-ের কিছুদিন পরেই ৭ মার্চ, ২০০৯ সালে, হোটেল রাজমনি ইশাখায় ক্যাপ্টেন রাজিবকে কৌশলে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় এবং ওই একই দিন (৭ মার্চ) বিকেলে তার ছোট বোন রাইফা হকের ওপরও গাড়ি চাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন তার কর্মস্থল বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে ফেরার জন্য গ্রীনলাইন বাসের রাজারবাগ কাউন্টারের উদ্দেশে বেলা এগারটার দিকে রওনা হন রাজিব। পথিমধ্যে বাসার অদূরেই রাজিবের কাছে একটা ফোন কল আসে এবং ওই ফোন কলে তিনি জানান যে, পাঁচ মিনিটের মধ্যেই তিনি রাজমনি হোটেলে পৌঁছাবেন। যা পরে রাজিবের মাকে ড্রাইভার জানায়। রাজিবকে সেদিন কৌশলে হোটেলে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে অত্যাচার করে হত্যা করা হয়। নির্যাতনের ফলে তার চেহারা বিকৃত করে ফেলা হয় যা তখন হাজার হাজার প্রত্যক্ষদর্শী মানুষ প্রত্যক্ষ করে। ঘটনার দিন রাজিবকে কে ফোন করেছিল এবং হঠাৎ গন্তব্য বদলে কেন তাকে হোটেলে যেতে বাধ্য করেছিল জানিয়ে এই ফোন কলের তদন্তের দাবি জানান তিনি।
ঘটনার দিন সেদিন সন্ধ্যা ৭ টার সময় রাজিবের বাসায় রাজিবের ফোন থেকেই একটি কল আসে যা তার ছোট বোন রাইফা রিসিভ করলে, অপর প্রান্ত থেকে রাজিবের কণ্ঠে "আম্মু আম্মু" করে ডাকা চিৎকার শুনতে পায় এবং কিছু লোকের কথাও শুনতে পায় যে, তারা বলছিল" বল বল" এমন ধরনের কিছু। রাইফা ফোন টা তার মাকেও তাৎক্ষণিক শুনতে দেয় এবং রাজিবের মা ফোনে শব্দ শুনে খুবই অস্থির হয়ে পরে। এরপরই ফোনের লাইন টা কেটে যায়। তার ঠিক ১৫ মিনিট পর রাজিবের বাসায় বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট থেকে কল করে জানানো হয় যে রাজিব আর এই দুনিয়াতে নেই বলে জানান নিহত রাজিবের এই মামা।
তিনি বলেন, হত্যাকান্ডের বেশ কয়েক মাস পর সেনাবাহিনীর তিন সদস্যের তদন্ত টিমের দুই জন সদস্য রাজিবের পরিবারকে জানান যে, রাজিবকে হত্যা করা হয়েছে এবং কারা হত্যা করেছে এটি তারা জানতেন। তবে তখনকার পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে রাজিবের পরিবারকে এর থেকে বেশিকিছু জানাতে তারা অপারগতা প্রকাশ করেন।
ক্যাপ্টেন রাজিব যে আত্মহত্যা করেনি দাবি করে অধ্যাপক মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের স্পষ্ট চিহ্ন ছিল। ময়না তদন্তের সময় দেখা গিয়েছে তার মুখে রভেতরের দাঁতগুলো ভাঙা। এছাড়া রাজিবের গলা, হাতের কব্জি ও পায়ের কব্জির রগ কেটে ফেলা হয়েছিল যা আমি এবং আমার পরিবারের আরও কয়জন নিজ চোখে দেখেছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নিহত রাজিবুলের মামা রোকনুজ্জামান, আব্দুস সবুর রাজা, খালা ফেরদৌসি পারভীন, খালু সৌকত আলী সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। মা ও ছোট বোন দেশের বাহিরে বসবাস করায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারেননি বলে জানান নিহতের বড় মামা অধ্যাপক মো: শফিকুল ইসলাম।
মন্তব্য করুন: