বুধবার, ১২ই মার্চ ২০২৫, ২৮শে ফাল্গুন ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল dailyvobnews@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • শেখ হাসিনা-জয়-রেহানার ১২৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ
  • দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়তে হবে
  • আইনশৃঙ্খলার অবনতি যারা ঘটাচ্ছে, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না
  • ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত, ৯০ দিনে ধর্ষণের বিচার করতে হবে
  • পতিত স্বৈরাচার নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছে
  • ঈদযাত্রায় নৌপথে অতিরিক্ত ভাড়া ও যাত্রীবহন করলে কঠোর ব্যবস্থা
  • প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ
  • হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য ও সকল সহযোগীর বিচার হবে
  • ইসির অধীনে এনআইডি সেবা না রাখার প্রস্তাব
  • আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্ন, যে জবাব দিলেন ড. ইউনূস

বিষ ছিটিয়ে চিংড়ি শিকার, সুন্দরবনের গহিনে শুঁটকির ‘কারখানা’

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত:
৩১ জুলাই ২০২৪, ১১:২৬

সুন্দরবনের গহিন অরণ্যে গাছ কেটে তৈরি করা হয়েছে বেশ ফাঁকা জায়গা। সেখানে সুন্দরী, পশুর, গেওয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ সাজিয়ে বিশেষ কায়দায় বানানো হয়েছে মাচা। আর এসব মাচার ওপর চিংড়ি রেখে নিচে তৈরি আরেকটি মাচায় কাঠ রেখে আগুন দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় চিংড়ি শুকিয়ে ম্যানগ্রোভ বনটির গহিনে তৈরি হয় শুঁটকি। সম্প্রতি বনের মার্কি ও মান্দারবাড়ি এলাকায় এমন দুটি স্থানের সন্ধান পেয়ে তা উচ্ছেদ করেছে বন বিভাগ। কর্তৃপক্ষের দাবি, বিষ দিয়ে ধরা চিংড়ি এসব স্থানে শুঁটকি বানিয়ে বাজারজাত করা হতো।

বন বিভাগের কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্য প্রাণী ও নদী-খালের মাছের বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় গত ১ জুন থেকে সুন্দরবনে প্রবেশের সব ধরনের অনুমতি দেওয়া বন্ধ রেখেছে বন বিভাগ—এটি চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এ নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও বনের ভেতর চলছে বিষ দিয়ে শিকার করা চিংড়ির শুঁটকি তৈরিসহ নানা অপরাধমূলক কার্যক্রম।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২৪ জুলাই সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত নৌপথে চলাচলকারী জাহাজের কর্মীদের মাধ্যমে চিংড়ি শুঁটকি লোকালয়ে পাঠানো হচ্ছিল। পথে সুন্দরবনের শিবসা নদীতে ওই জাহাজ থামিয়ে ১৫টি বস্তায় প্রায় ৩০০ কেজি শুঁটকিসহ দুই জেলেকে গ্রেপ্তার করেন বনরক্ষীরা। তাঁরা হলেন কয়রা উপজেলার ৪ নম্বর কয়রা গ্রামের শহিদুল সরদার ও পল্লীমঙ্গল গ্রামের আবু বাক্কার সানা। তাঁদের দেওয়া তথ্যে মার্কি ও মান্দারবাড়ি এলাকায় ওই দুটি স্থানের সন্ধান পাওয়া যায়। গ্রেপ্তার ওই জেলেদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে আদালতের নির্দেশে জব্দ করা শুঁটকি বিনষ্ট করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সুন্দরবনের নলিয়ান ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা তানজিলুর রহমান বলেন, দুই জেলেকে নিয়ে চিংড়ি শুকানোর ওই জায়গা খুঁজে বের করতে এক দিন সময় লেগেছে। স্থানটি বনের এত গহিনে যে ভাটার সময় নৌকা নিয়ে যাওয়া যায় না। জোয়ারের সময়েও ছোট নৌকা ওই খালে প্রবেশ করতে বেশ কষ্ট হয়। এরপর খালের পাড় থেকে অনেক দূর হেঁটে যাওয়ার পর মাচার দেখা পাওয়া যায়। সেখানে যেন শুঁটকির কারখানা তৈরি করা হয়েছিল।

কয়রার সুন্দরবনসংলগ্ন জোড়শিং এলাকার বনজীবী জেলে আবদুর রউফের দাবি, এই বন্ধ মৌসুমে সুন্দরবনে যতটা বিষ পড়ে, সারা বছর মিলিয়েও ততটা বিষাক্ত হয় না বন। তিন মাস বন বিভাগ পাস (অনুমতি) না দেওয়ায় কোনো জেলে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারেন না। তবে কিছু অসাধু লোক অবৈধভাবে গহিন বনের মধ্যে গিয়ে বিষ ছিটিয়ে চিংড়ি ধরেন। বিষ দিয়ে শিকার করা চিংড়ি লোকালয়ে আনা যায় না। তাই অসাধু জেলেরা এখন বনের মধ্যে মাচা করে আগুনের তাপে চিংড়ি শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করে বিশেষ কৌশলে শহরে পাঠান।

স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, ভারতের হেমনগর ও কলকাতা বন্দর থেকে সিমেন্টের কাঁচামাল নিয়ে কয়রার সুন্দরবনসংলগ্ন আংটিহারা শুল্ক অফিস হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে কিছু ছোট জাহাজ। সেখানে কাজ শেষে এসব ছোট জাহাজ সুন্দরবনের শাকবাড়িয়া, বজবজা, আড়ুয়া শিবসা, শিবসা নদী হয়ে নলিয়ান-চালনা হয়ে মোংলা বা খুলনায় যায়। এসব জাহাজের কর্মীদের মাধ্যমে হরিণের মাংস, চিংড়ি ও শুঁটকি পাচার হয়।

সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, বিষয়টি খুব উদ্বেগের। এতে একদিকে যেমন জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে বনের পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এ ব্যাপারে বন বিভাগের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মামলায় তাঁরা এ অপরাধের মূল মদদদাতাদের নামও উল্লেখ করবেন।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর