বুধবার, ১২ই মার্চ ২০২৫, ২৮শে ফাল্গুন ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল dailyvobnews@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • শেখ হাসিনা-জয়-রেহানার ১২৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ
  • দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়তে হবে
  • আইনশৃঙ্খলার অবনতি যারা ঘটাচ্ছে, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না
  • ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত, ৯০ দিনে ধর্ষণের বিচার করতে হবে
  • পতিত স্বৈরাচার নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছে
  • ঈদযাত্রায় নৌপথে অতিরিক্ত ভাড়া ও যাত্রীবহন করলে কঠোর ব্যবস্থা
  • প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ
  • হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য ও সকল সহযোগীর বিচার হবে
  • ইসির অধীনে এনআইডি সেবা না রাখার প্রস্তাব
  • আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্ন, যে জবাব দিলেন ড. ইউনূস

আবার হামলা চালাতে ঢাকায় আত্মগোপনে জামায়াত-শিবির কর্মীরা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত:
৩১ জুলাই ২০২৪, ১১:১৬

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে নাশকতা চালাতে অন্তত সাড়ে তিন শ কোটি টাকা দিয়েছে জামায়াত-শিবির। সরকার পতনের লক্ষ্যে তারা এই বিপুল অর্থে দলীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষের পাশাপাশি কিশোর-তরুণদের হাত করে। এরপর তাদের সঙ্গে নিয়ে বিটিভিসহ রাজধানীর রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকে হামলা চালিয়ে লুটেরও পরিকল্পনা ছিল তাদের।

গতকাল মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সরকারের একটি বিশেষে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক নাশকতায় ঢাকার বাইরে থেকে বিপুলসংখ্যক জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী ঢাকায় ঢোকেন। কোটা আন্দোলনের শুরু থেকে তাঁরা ঢাকার প্রবেশপথগুলোসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেন। তাঁদের কাছে অগ্নেয়াস্ত্রসহ ধারালো দেশি অস্ত্র ছিল।

এরপর তাঁরা কোটা আন্দোলনকারীদের মধ্যে ঢুকে পুলিশের ওপর হামলা, স্থাপনায় আগুন, ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধা দেওয়াসহ সহিংসতা চালান। নাশকতাকারী জামায়াত-শিবিরের এসব নেতাকর্মী এখনো ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছেন। তাঁরা আবার চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে পারেন বলে ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়।

গত সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে ১৪ দলের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠক চলাকালেই প্রধানমন্ত্রী এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আইন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন। এর আগে বৈঠকের আলোচনায়ও চলমান নাশকতায় জামায়াত-শিবিরের অর্থ বিনিয়োগসহ তারা যে এখনো ঢাকায় অবস্থান করছে, সে বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

পুলিশ বলছে, গত সোমবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার কাটাসুর এলাকায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেনকে মুখোশ পরা দুর্বৃত্তরা হত্যা করে। এতে জামায়াত-শিবিরের দুর্বৃত্তরাও জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছে পুলিশ।

সরকারকে বিপাকে ফেলতে ব্যাপক নাশকতার পরিকল্পনা

সরকারকে বিপাকে ফেলতে কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক নাশকতার তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।

এ নিয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের ঊর্ধ্বতনদের কাছেও দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, নাশকতায় জড়িতদের বেশির ভাগ জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী। বাইরে থেকে এসে তাঁরা ঢাকায় নাশকতা চালান। তাঁরা এখনো ঢাকা ছাড়েননি। ঢাকার সীমান্তবর্তী এলাকার পাশাপাশি যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ রাজধানীর আরো বেশ কয়েকটি এলকায় আত্মগোপনে রয়েছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে ঢাকার উপকণ্ঠ সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় তাঁরা আত্মগোপনে রয়েছেন। যেকোনো সময় তাঁরা ফের নাশকতা চালাতে পারেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নাশকতার পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের অনেক শীর্ষ পর্যায়ের নেতার নাম পাওয়া গেছে জানিয়ে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, তদন্তে তাঁরা অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছেন, চলমান সৃষ্ট অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে সরকার উত্খাতের চিন্তা-ভাবনা করেই এই ব্যাপক নাশকতা চালানো হয়। ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে হামলাকারীদের মূল টার্গেট ছিল গণভবনসহ ধানমণ্ডির সুধা সদন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। তারা এখনো এই পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে নাশকতার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলে তথ্য পেয়ে সতর্ক রয়েছেন গোয়েন্দারা।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াত-শিবিরের মাঠ পর্যায়ের এক নেতা গতকাল (৩০ জুলাই) বলেন, তাঁদের মূল টার্গেট সরকার পতন। সরকার তাঁদের নিষিদ্ধ করবে বলে জানতে পেরেছেন তাঁরা। তবে তাঁরা সরকার পতনের কর্মসূচি থেকে পেছাবেন না। তাঁদের কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের এই নির্দেশ দিয়েছেন।

জামায়াতের টাকায় অন্যরাও সংগঠিত

চলমান নাশকতায় অর্থ বিনিয়োগে জামায়াতের পাশাপাশি অন্য দলের নেতাদের সম্পৃক্ততার বিষয়েও তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, নুরের কাছে আসে ৬৫ লাখ টাকা। তিনি সেই টাকা তাঁর দলের নেতাদের হাতে তুলে দেন।

ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিবি।

চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কা

নাশকতাকারীরা আবার রাজধানীসহ সারা দেশে চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ঊর্ধ্বতনরাও। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন আর কোটাবিরোধী আন্দোলন ছাত্রদের হাতে নেই। এই আন্দোলনে ঢুকে পড়েছে বিএনপি-জামায়াত। তারা ছদ্মবেশে এই আন্দোলনে প্রবেশ করে নাশকতা চালিয়েছে। আগামী দিনে তারা ফের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের টার্গেট করে চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে পারে।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন ঢুকে নাশকতা করছে। তারা আরো নাশকতা করার চেষ্টা করছে।

ফের হামলার আশঙ্কায় পুলিশের সতর্কতা

সম্প্রতি কোটা আন্দোলনে সৃষ্ট সহিংসতায় হতাহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে বেশির ভাগই কর্মক্ষেত্র থেকে বাসায় যাওয়ার পথে হামলার শিকার হয়েছেন জানিয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, এই পরিস্থিতিতে একা একা পুলিশ সদস্যদের চলাফেরা করতে নিরুৎসাহ করা হয়েছে। কারণ জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা নিজেদের পরিচয় লুকাতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড বানিয়ে গলায় ঝুলিয়ে রাস্তায় নামে বলে তথ্য পান তাঁরা।

নাশকতায় খোঁজা হচ্ছে জঙ্গিদের সম্পৃৃক্ততা

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট অরাজক পরিস্থিতির নেপথ্যে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি দলের সদস্যদেরও সম্পৃক্ততা খোঁজা হচ্ছে। গত কয়েক দিনের নাশকতার এসব ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের পাশাপাশি উগ্র-মৌলবাদী গোষ্ঠীর সদস্যরাও ছিল।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর