বুধবার, ২৫শে ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ই পৌষ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল dailyvobnews@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • আন্দোলনে নামলেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা
  • বায়ুদূষণে আজ তৃতীয় ঢাকা, বেশি দূষণ যেসব এলাকায়
  • পান্থকুঞ্জ ও আনোয়ারা পার্ক নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে
  • দেশকে কোনও দলের কাছে ইজারা দেয়া হয়নি
  • সাগরে নিম্নচাপ, দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি শুরু
  • ড. ইউনূস আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দেবেন আজ
  • ২৬ শতাংশ রেমিট্যান্স বেড়েছে হাসিনার পতনের পর
  • পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা প্রশ্নে রায় ঘোষণা চলছে
  • ৬ কমিশনের প্রধানদের নিয়ে হবে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’
  • নৌবাহিনীর ৩২ কর্মকর্তা পেলেন অনারারী কমিশন

ভারতে শকুন কমে যাওয়া যেভাবে ৫ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠল

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত:
২৭ জুলাই ২০২৪, ১৪:০২

একসময় ভারতের সবখানে বিপুলসংখ্যক শকুন দেখা যেত। আবর্জনার স্তূপের ওপর ও মৃত প্রাণীর সন্ধানে ওড়াওড়ি করত এ বিশেষ শ্রেণির পাখিরা। বিমানবন্দরে ওঠানামা করার সময় কখনোবা উড়োজাহাজের ইঞ্জিনে ঢুকে পাইলটদের জন্য বিপদের কারণ হয়েও উঠতে দেখা গেছে শকুনদের।

কিন্তু দুই দশকের বেশি আগে থেকে ভারতে শকুনেরা মারা যেতে থাকে। এর কারণ ছিল, অসুস্থ গরুর চিকিৎসায় একধরনের ওষুধের ব্যবহার।

১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি ভারতে শকুনের সংখ্যা ছিল পাঁচ কোটি। তখন থেকেই আবার গবাদিপশুর চিকিৎসায় সস্তা নন–স্টেরয়ডাল ব্যথানাশক ‘ডাইক্লোফেনাক’–এর ব্যবহার শুরু হয়। এতে বিপুলসংখ্যক শকুন কমতে কমতে এসে দাঁড়ায় একরকম শূন্যের কোঠায়। ওই ওষুধে চিকিৎসা করা পশুর মৃতদেহ খেয়ে অসুস্থ হওয়ার পর শকুনগুলো মারা যেতে থাকে।

এ ঘটনায় ২০০৬ সালে গবাদিপশুর চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে সরকার। ফলে কিছু এলাকায় শকুন হ্রাস পাওয়ার প্রবণতা কমে। তবে স্টেট অব ইন্ডিয়া’স বার্ডসের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দীর্ঘমেয়াদে শকুনের অন্তত তিনটি প্রজাতির ৯১–৯৮ শতাংশ এ ওষুধের পরোক্ষ বিষক্রিয়ার শিকার হয়।

ডাইক্লোফেনাকের ব্যবহার শুধু শকুন কমে যাওয়ার মধ্যে সীমিত থাকেনি। এক নতুন গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মৃত পশুর দেহাবশেষ খেয়ে বেঁচে থাকা এই পাখি কমে যাওয়ায় প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়া ও নানা সংক্রমণ বেড়ে যায়; যা পাঁচ বছরে প্রায় অর্ধমিলিয়ন (পাঁচ লাখ) মানুষের মৃত্যুতে ভূমিকা রাখে। এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন আমেরিকান ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশন সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণার সহরচয়িতা ও ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর হ্যারিস স্কুল অব পাবলিক পলিসির সহকারী অধ্যাপক ইয়েল ফ্রাঙ্ক বলেন, ‘শকুনকে প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে ধরা হয়। কেননা, পরিবেশ থেকে নানা ক্ষতিকর উপাদান ও মৃত পশুর ব্যাকটেরিয়াবাহী দেহাবশেষ অপসারণে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শকুন না থাকলে ছড়িয়ে পড়তে পারে রোগবালাই।’

ইয়েল ফ্রাঙ্ক আরও বলেন, ‘মানবস্বাস্থ্য রক্ষায় শকুনের ভূমিকা বন্যপ্রাণী রক্ষার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। শুধু আকর্ষণীয় ও আদুরে প্রাণীই যে রক্ষা করা প্রয়োজন, তা নয়; বরং সব বন্য প্রাণীই রক্ষা করতে হবে। আমাদের প্রতিবেশ ব্যবস্থায় সব প্রাণীরই ভূমিকা রয়েছে; যা আমাদের জীবনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।’

ইয়েল ফ্রাঙ্ক ও গবেষণার অপর সহরচয়িতা অনন্ত সুদর্শন ভারতের একসময়ের শকুনসমৃদ্ধ বিভিন্ন জেলায় শকুন কমে যাওয়ার আগে ও পরে মানুষের মৃত্যুর হারের তুলনামূলক চিত্র দেখেছেন। জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন বিক্রি, খ্যাপাটে কুকুরের সংখ্যা ও সরবরাহ করা পানিতে প্যাথোজেনের উপস্থিতির মাত্রাও পরীক্ষা–নিরীক্ষা করেছেন তাঁরা।

এই গবেষকেরা দেখেন, গবাদিপশুর চিকিৎসায় প্রদাহবিরোধী বা ব্যথানাশক ওষুধের বিক্রি বেড়ে যাওয়ার পর শকুনের সংখ্যা কমে গেছে এবং একসময়ের শকুনসমৃদ্ধ জেলাগুলোতে মানুষের মৃত্যুর হার চার শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে।

ডাইক্লোফেনাকের ব্যবহার শুধু শকুন কমে যাওয়ার মধ্যে সীমিত থাকেনি। এক নতুন গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মৃত পশুর দেহাবশেষ খেয়ে বেঁচে থাকা এই পাখি কমে যাওয়ায় প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়া ও নানা সংক্রমণ বেড়ে যায়; যা পাঁচ বছরে প্রায় অর্ধমিলিয়ন মানুষের মৃত্যুতে ভূমিকা রাখে।
গবেষকেরা আরও দেখেন, শকুনের সংখ্যা কমে মানুষের মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার এমন প্রবণতা বেশি ছিল শহরাঞ্চলে। সেখানে গবাদিপশু সংখ্যায় ছিল অনেক। ছিল মৃতপশুর ভাগারও।

এ গবেষকদের ধারণা, ভারতে ২০০০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে শকুন কমে যাওয়ায় ওই সময় প্রতিবছর অতিরিক্ত ১ লাখ করে মানুষের মৃত্যু হয়। অকালমৃত্যুর এসব ঘটনার ফলাফল হিসেবে প্রতিবছর আর্থিক ক্ষতিও হয়েছে ৬৯ বিলিয়ন (৬ হাজার ৯০০ কোটি) ডলারের বেশি।

গবেষণা বলছে, রোগবালাই ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবছর বাড়তি এত মানুষ মারা গেছেন। অথচ শকুন না কমলে এসব রোগের বিস্তার ঠেকানো সম্ভব হতো ও পরিবেশ থেকে ব্যাকটেরিয়া দূর করা যেত। উদাহরণ হিসেবে, শকুন কমে যাওয়ায় খ্যাপাটে কুকুরের সংখ্যা বেড়ে যায় ও মানুষের মধ্যে জলাতঙ্ক ছড়ায়।

ওই সময় জলাতঙ্কের ভ্যাকসিনের বিক্রি বেড়ে যায়; কিন্তু এর সরবরাহ যথেষ্ট ছিল না। মৃত পশুর দেহাবশেষ অপসারণে শকুন যতটা ভূমিকা রাখে, কুকুর ততটা রাখে না। এতে সুষ্ঠু পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে সরবরাহ করা খাওয়ার পানিতে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাকটেরিয়া ও প্যাথজেন।

স্টেট অব ইন্ডিয়া’স বার্ডসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতে বর্তমানে যেসব শকুন রয়েছে, তারা মূলত গবাদিপশুর চেয়ে সংরক্ষিত এলাকার বন্য প্রাণীর মৃতদেহ খেয়ে টিকে আছে। অব্যাহতভাব শকুন কমতে থাকার বিষয়টি এই পাখির বিরুদ্ধে হুমকি চলমান থাকাকে ইঙ্গিত করছে। একই সঙ্গে তা মানবস্বাস্থ্যের ওপর শকুন কমে যাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগও বাড়িয়ে তুলছে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, গবাদিপশুর চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ এখনো শকুনের জন্য এক বড় হুমকি। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত গবাদিপশুর মৃতদেহ কমে যাওয়া, খ্যাপাটে কুকুরের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া ওই সমস্যা বাড়িয়ে তুলছে।

প্রশ্ন উঠেছে, শকুন কি আবার স্বাভাবিক সংখ্যায় ফিরে আসবে? এর জবাব দেওয়াটা কঠিন। তবে এ নিয়ে কিছু আশাবাদী লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। দক্ষিণ ভারতে সম্প্রতি এক জরিপে তিন শতাধিক শকুনের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। অবশ্য, আরও পদক্ষেপ নিতে হবে।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর