প্রকাশিত:
১১ জুলাই ২০২৪, ১৫:৫৯
২০২১ সালে কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতে ২৮ বছরের আন্তর্জাতিক শিরোপা খরা কাটায় আর্জেন্টিনা। সেখান থেকে শুরু, এরপর যেন অপ্রতিরোদ্ধ হয়ে ওঠে আলবিসেলেস্তেরা। ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপে ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে লিওনেল মেসির নেতৃত্ব শিরোপা উঁচিয়ে ধরে আর্জেন্টিনা। আবারও কোপা আমেরিকার শিরোপার জয়ের দ্বারপ্রান্তে মেসি-ডি মারিয়ারা। কানাডার বিপক্ষে ম্যাচের আগে মেসি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ডি মারিয়ার জন্য জিততে চান কোপার শিরোপা। সেই লক্ষ্যে আরো একধাপ এগিয়ে গেল বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। এছাড়াও ট্রফি হাতে ডি মারিয়াকে বর্ণিল বিদায় দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে গোটা আর্জেন্টিনা।
গতকাল সকালে দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে কানাডার বিপক্ষে মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচে কিছু অগোছালো ফুটবল খেললেও ২-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্কালোনির শিষ্যরা। আর্জেন্টিনার চেয়ে কানাডার দুর্বল প্রতিপক্ষ হওয়ায় এই ম্যাচে বিশ্রামে রাখা হয়েছে এবারের আসরের আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতা লাওতারো মার্টিনেজকে। তার জায়গায় খেলানো হয়েছে তরুণ ফরোয়ার্ড জুলিয়ান আলভারেজকে। দিয়েছেনও কোচের আস্থার প্রতিদান। ম্যাচের প্রথম গোলটি আসে এই ২৪ বছর বয়সী এই ফুটবলারের পা থেকে। সেই সঙ্গে কানাডার বিপক্ষে এই ম্যাচে মেসি ভক্তদের অপেক্ষার অবসান হয়েছে।
গতকাল এবারের আসরের প্রথম গোলের দেখা পেলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। ম্যাচের ৫১ মিনিটে কানাডার জালে বল জড়ান তিনি। সেই সঙ্গে গড়েন রেকর্ডও। ইরানের তারকা ফুটবলার আলী দাইকে পিছনে পেলে ১০৯টি গোল করে আন্তর্জাতিক ফুটবলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন এলএমটেন। ১৩০টি গোল করে এই তালিকায় সবার ওপরে আছেন তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পর্তুগিজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।
এছাড়াও ফাইনালে মাঠে নামলেই আরেক রেকর্ড গড়বেন তিনি। কেননা মেসিই একমাত্র ফুটবলার। যিনি কোপা আমেরিকার ছয়টি আসরে ফাইনাল খেলবেন। অন্যদিকে এই ম্যাচের মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানাবেন আর্জেন্টিনার ‘বিগ ম্যাচ’ প্লেয়ার খ্যাত আনহেল ডি মারিয়া। তিনি বলেছেন, ‘এটা আমার শেষ ম্যাচ। বলার মতো কিছুই বাকি নেই। আমি এই কথা অনেকবার বলেছি। এটাই আমার শেষ খেলা। আমি আর্জেন্টিনার সকলকে এবং এই প্রজন্মকে ধন্যবাদ জানাই, যারা আমাকে এত ট্রফি তুলতে দিয়েছে।’
এছাড়াও নিজের বিদায় নিয়ে তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি জাতীয় দলের হয়ে আমার শেষ ম্যাচে মাঠে নামতে প্রস্তুত নই। তবে সময় চলে এসেছে বিদায় নেওয়ার। ফাইনালে যাই ঘটুক না কেন, আমি মনে করি, আমি প্রধান দরজা দিয়ে চলে যেতে পারি। আমি সব কিছু দিয়েছি। আমি সব সময় এই জার্সির জন্য আমার জীবন দিয়েছি।’
যার কারণে এই ম্যাচে ডি মারিয়ার ওপর বাড়তি নজর থাকবে আর্জেন্টাইন ভক্তদের। কেননা একবিংশ শতাব্দীতে আর্জেন্টিনা এখন পর্যন্তটি আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতেছে। সেই তিন ফাইনালে প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়েছেন ৩৬ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার। এছাড়া এখনো আর্জেন্টাইন ভক্তরা আক্ষেপে পোড়ে। কেননা ২০১৪ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে ইনজুরির কারণে জার্মানির বিপক্ষে খেলতে পারেন ডি মারিয়া। অনেক ভক্তদের দাবি, সেবার ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে যদিও এই মিডফিল্ডার খেলতে পারত। তাহলে হয়তো আলবিসেলেস্তারা আরও আগেই বিশ্বকাপ শিরোপার খরা কাটাতে পারত।
আর্জেন্টাইন জাতীয় দলে লিওনেল মেসির একমাত্র পুরাতন বন্ধু ডি মারিয়া। বিশ্বকাপ শিরোপা হাতছাড়ার পর একসঙ্গে কেঁদেছেন, বিশ্বকাপ শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছেনও একসঙ্গে। নিজের প্রিয় বন্ধু ও সতীর্থের বিদায়লগ্ন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা তাকে নিয়ে সময়টা অনেক উপভোগ করেছি। তিনি সর্বদা তার সর্বোত্তম এবং নিজের সেরাটা দিয়েছেন। ফাইনালে তিনি অবসর নেবেন এমন কিছু যা তার প্রাপ্য।’
এছাড়াও কানাডার বিপক্ষে ম্যাচের পর দলের আস্থার প্রতীক ডি মারিয়ার অবসর নিয়ে কোচ লিওনেল স্কালোনি বলেন, ‘আমরা এখনই কান্না শুরু করতে চাই না। আমরা বিষাদ অনুভব করতে চাই না। আমাদের তাকে খেলতে দিতে হবে এবং তারপর আমরা দেখব আমরা তাকে আমাদের সঙ্গে থাকতে রাজি করাতে পারি কি না।’
মন্তব্য করুন: