প্রকাশিত:
২৩ জুন ২০২৪, ১২:২৪
অর্থবছরের শেষ সময়ে এসে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার দেনা পরিশোধের চাপে রয়েছে সরকার। মহামারি করোনার মতো বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের সময়েও দেনা পরিশোধে বাজেট সহায়তা দিয়ে পাশে রয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা। যার মধ্যে চলতি জুন মাসেই ১.২৫ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পাচ্ছে সরকার। ঋণচুক্তি সই হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সহায়তা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য বলছে, করোনার পর দ্বিতীয়বারের মতো কোনো একক অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি বাজেট সহায়তা নিচ্ছে সরকার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকার সর্বোচ্চ ২.৫৯৭ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা নিয়েছিল।
জানা গেছে, ১.২৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ২৫০ মিলিয়ন দিচ্ছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), যা গত ১০ জুন এডিবির সঙ্গে ইআরডির বাজেট সহায়তায় ঋণচুক্তি হয়েছে। এ ছাড়া ৫০০ মিলিয়ন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক, ৪০০ মিলিয়ন ডলার দেবে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) এবং ১০০ মিলিয়ন ডলার দেবে দক্ষিণ কোরিয়া।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে এডিবির সঙ্গে ৪০০ মিলিয়ন ডলার এবং কোরিয়ার সঙ্গে ১০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়। এ ছাড়া গত ২০ মে ফরাসি উন্নয়ন সংস্থার (এএফডি) সঙ্গে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি চূড়ান্ত হয়। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে মোট বাজেট সহায়তার পরিমাণ হবে ২.০৬ বিলিয়ন ডলার।
মূলত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রাজস্ব আহরণের মাঝের ফাঁক পূরণে এবং বাজেট ঘাটতি মেটাতে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা নেয় সরকার।
এই টাকা বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার বিল ও দেনা পরিশোধ করে সরকার।
কভিডের সময় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়নে পৌঁছালেও বর্তমানে তা কমে আইএমএফের রিজার্ভ হিসাবায়ন পদ্ধতি পিপিএম-৬ অনুযায়ী ১৮.৬৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ রয়েছে ১৩ বিলিয়নের মতো। রিজার্ভ সংকট মোকাবেলায় সরকার চলতি অর্থবছরজুড়ে আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, সরকার গত অর্থবছর (৩০ জুন, ২০২৩ পর্যন্ত) মোট ১১.০৯ বিলিয়ন বাজেট সহায়তা নিয়েছে।
মূলত কভিড-১৯-পরবর্তী সময়ে টিকা কেনা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সরকারের বাজেট সহায়তার পরিমাণ বাড়ে। এ ছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতেও বাজেট সহায়তা কার্যক্রম জোরদার করেছিল সরকার।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার ১.৭৬৯ বিলিয়ন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২.৫৯৭ বিলিয়ন এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ১.০৯ বিলিয়ন এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা নেয় সরকার। এর আগের অর্থবছরে বাজেট সহায়তার পরিমাণ ছিল ০.২৫১ বিলিয়ন ডলার।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে এডিবি ৪০০ মিলিয়ন ডলারের আরেকটি বাজেট সহায়তা দেবে বাংলাদেশকে। ‘প্রমোটিং ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট’ (সাবপ্রগ্রাম-১) শীর্ষক এই বাজেট সহায়তার ঋণচুক্তি সই হয় গত বছরের ডিসেম্বরে।
এডিবির এই বাজেট সহায়তার সঙ্গে একই প্যাকেজে এআইআইবির ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তার নিশ্চিয়তা আগেই পাওয়া গিয়েছিল। চলতি মাসে ‘ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট প্রগ্রাম’ (সাবপ্রগ্রাম ১) শীর্ষক এই বাজেট সহায়তার ঋণচুক্তি সই হবে বলে ইআরডির কর্মকর্তারা জানান।
ইআরডির তথ্য মতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল ১০ মাসে সুদ ও আসল বাবদ আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের প্রায় ২৮১ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে সরকার। গত অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধ করেছিল ১৯৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে ৮৬ কোটি ডলার। এর মধ্যে সুদ পরিশোধ করা হয়েছে ১১৪ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে।
উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য উচ্চ সুদের ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমানে সরকার সতর্ক হচ্ছে এবং সে জন্যই আরো বেশি বাজেট সহায়তা ঋণের দিকে ঝুঁকছে বলে দেখা যাচ্ছে। প্রকল্প ঋণের তুলনায় এ ধরনের ঋণের শর্ত তুলনামূলকভাবে সহজ হয়। আর তা পাওয়া গেলে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ওপর চাপও কিছুটা কমে।
সাধারণত বাজেট সহায়তা ঋণ দেওয়ার জন্য উন্নয়ন সহযোগীরা কিছু শর্ত দেয়। এডিবি ও কোরিয়ার এই বাজেট সহায়তার আওতায় সরকার জলবায়ুসংক্রান্ত বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক অর্থবছরগুলোয় সরকারের বাজেট সহায়তা নেওয়ার পরিমাণ বাড়তে দেখা যায়। মূলত কভিড-১৯-পরবর্তী সময়ে টিকা কেনা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য বাজেট সহায়তার পরিমাণ বেড়েছে। এ ছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকার বাজেট সহায়তা নেওয়ার কার্যক্রম জোরদার করে।
মন্তব্য করুন: