প্রকাশিত:
২০ জুন ২০২৪, ১২:২৪
আর্জেন্টিনা দলকে ঘিরে কয়েক বছরের মধ্যে সবকিছু যেন বদলে গেছে। খরা শব্দটি দলটির সখা ছিল দীর্ঘ বছর, এখন সে শব্দের জায়গা নিয়েছে মুকুট ধরে রাখার মিশন! সেই মিশনের শুরু আর্জেন্টিনা করতে যাচ্ছে এবারের কোপা আমেরিকা দিয়ে। আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে মেসি-দি মারিয়াদের প্রতিপক্ষ কানাডা।
এই প্রতিযোগিতায় কানাডা যেখানে একেবারেই নবাগত, সেখানে আর্জেন্টিনা অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ, সাফল্যে বাকিদের কাছে ঈর্ষণীয় এবং সব দিক থেকে এত উঁচুতে যে, অন্যদের নাগাল পাওয়াই কঠিন।
উরুগুয়ের মতো ১৫টি শিরোপা দ্যুতি ছড়াচ্ছে আলবিসেলেস্তেদের অর্জনের শোকেসে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার শুরু হতে যাওয়া আসরটি তাই আর্জেন্টিনার জন্য সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ের রেকর্ড এককভাবে নিজেদের করে নেওয়ার মিশনও।
লিওনেল স্কালোনির দলের পথচলা কতটা মসৃণ হবে, কানাডা ম্যাচ দিয়েই তার একটা আভাস পাওয়া যাবে। জর্জিয়ার মার্সিডিজ-বেঞ্জ অ্যারেনায় বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোর ৬টায় শুরু হবে ম্যাচটি।
পরিসংখ্যানকে যতই পাত্তা না দেওয়া হোক, তারপরও বর্তমানের ধারণা নিতে অতীতের পাতায় ঢু মারা সহজাত বিষয়। সে পাতা দেখাচ্ছে, ২০১০ সালে বুয়েন্স আইরেসে প্রীতি ম্যাচে প্রথম ও সবশেষ মুখোমুখি হয়েছিল এই দুই দল; কানাডা উড়ে গিয়েছিল ৫-০ গোলে। ওই ম্যাচে জালের দেখা পাওয়াদের মধ্যে বর্তমান আর্জেন্টিনা দলে আছেন কেবল আনহেল দি মারিয়া; এবারের কোপা’য় যিনি জাতীয় দলের জার্সিতে নামবেন শেষবার।
যদিও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নেই, লিওনেল মেসিরও শেষ কোপা আমেরিকা হতে পারে এটি। শেষটা রাঙানোর দুর্নিবার তাড়না থেকেই হয়ত এই মহাতারকা ভীষণ সতর্ক। সতীর্থদের মনে করিয়ে দিয়েছেন, মুকুট জয়ের চেয়ে ধরে রাখা কঠিন!
“আজ আমরা বলতে পারি যে, আমরাই সেরা। কেননা, আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। কিন্তু এই বিশ্বাস নিশ্চিত করে দেবে না যে, আমরা অনায়াসে এই কোপা আমেরিকা জিতে যাব।”
মেসির কথাতেই পরিষ্কার অনেকটা পথ হেঁটে এত দূর এসে থমকে যেতে চান না তিনি, আর্জেন্টিনাও। ১৯৯৩ সালের পর ২৮ বছরের খরা কাটিয়ে মহাদেশীয় ফুটবলের মুকুট ফিরে পেয়েছে তারা, ২০২১ সালে। ১৯৮৬ সালের পর বিশ্বকাপের অনির্বচনীয় স্বাদ ফিরে পাওয়ার গল্পও আর্জেন্টিনা লিখেছে ২০২২ সালে, কাতারে।
২০২১ কোপা আমেরিকার ১৫তম ট্রফি জয়ের আগে ফাইনালের মঞ্চ থেকে চারবার খালি হাতে ফেরার হতাশা সঙ্গী হয়েছিল আর্জেন্টিনার-২০০৪, ২০০৭, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে। ২০১৯-এ সেমি-ফাইনাল থেকে ছিটকে যাওয়ার পর তৃতীয় হয়েছিল তারা।
তারপরও এই প্রতিযোগিতা মুঠোভরে দিয়েছে আর্জেন্টিনাকে। সেরা তিনে ৩৪ বারের উপস্থিতি (১৫ বার চ্যাম্পিয়ন, ১৪ বার রানার্সআপ, ৫বার তৃতীয়) এবং ১২৮ ম্যাচ জয়ের ঈর্ষণীয় রেকর্ড তাদেরই। কানাডার বিপক্ষে স্বাভাবিকভাবে যোজন যোজন এগিয়ে লিওনেল স্কালোনির দল।
প্রতিযোগিতার কাঠামোয় এবার পরিবর্তন আসায় সুযোগ মিলেছে কানাডার। দক্ষিণ আমেরিকার ১০টি, উত্তর ও মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চল থেকে আরও ৬টি, সব মিলিয়ে ১৬ দল নিয়ে হচ্ছে ৪৮তম আসর।
এ আসরেও যথারীতি ফুটবলপ্রেমীদের আগ্রহের ভরকেন্দ্রে মেসি। প্রতিযোগিতাটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় তিনি (১৩টি) আছেন সপ্তম স্থানে; ১৭ গোল নিয়ে এই তালিকায় শীর্ষে তার স্বদেশি নরবের্তো মেন্দেস ও ব্রাজিলের জিজিনিয়ো। সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টের (১৭টি) রেকর্ড অবশ্য এই বাঁ পায়ের জাদুকরের।
কানাডার বিপক্ষে খেলতে নামলেই আরেকটি রেকর্ড নিজের করে নেবেন মেসি। প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি ম্যাচ (৩৪টি) খেলার রেকর্ড এ মুহূর্তে তাকে ভাগাভাগি করতে হচ্ছে চিলির সের্হিও লিভিংস্তোনের সাথে।
শিরোপা ধরে রাখার অভিযানের জন্য কোচ স্কালোনি দল গুছিয়েছেন পরীক্ষিতদের নিয়েই; কাতার বিশ্বকাপ জয়ী দলের ২১ জন খেলোয়াড় আছেন স্কোয়াডে। পাওলো দিবালার অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন, আক্ষেপ থাকতে পারে একটু-আধটু, কিন্তু তাদের বর্তমান দলটির সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি এখনও।
সামর্থ্যের প্রমাণ অবশ্য পেশাদার ফুটবলে দিতে হয় সারাক্ষণই। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে আর্জেন্টিনার শীর্ষে থাকা, কানাডার ৪৯তম সারিতে অবস্থান-এগুলো দেয় না জয়ের নিশ্চয়তা। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচ সামনে রেখে কানাডা কোচ জেসি মার্শও যেমন শোনালেন আশাবাদ। বললেন, নতুন প্রজন্মের কাঁধে সওয়ার হয়ে নতুন যুগে পা রাখতে চান তিনি।
এবারের কোপা আমেরিকাকে ২০২৬ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবেও নিচ্ছে কানাডা। দুই বছর পরের আসরটি তারা যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর সাথে মিলে আয়োজন করবে। তাদের বর্তমান দলটির দিকে তাকালেও মিলছে তেমনই ইঙ্গিত। মাত্র দুজন খেলোয়াড় ৩০ বা ত্রিশোর্ধ- গোলকিপার ম্যাক্সিম ক্রেপো (৩০ বছর) এবং মিডফিল্ডার জোনাথন ওসোরিও (৩২ বছর)। ১৫ জনের বয়স ২৫ বছর কিংবা তারও নিচে।
“আমি মনে করি, এটা এই নতুন গ্রুপের জন্য ভালো হয়েছে। এটা নতুন একটা যুগের মতো এবং ছেলেরা আসলেই ভালো সাড়া দিচ্ছে।”
এখন অপেক্ষা, কানাডার এই নতুনেরা ফুটবলের পরাশক্তি আর্জেন্টিনার বিপক্ষে কেমন সাড়া দেয়, সেটা দেখার। আর আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা তো বটেই, বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরাও তাকিয়ে থাকবেন ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বিকেলে আর্জেন্টিনার মুকুট ধরে রাখার মিশনে মেসি এবার সাড়া দেন কেমন।
কিছুটা ধারণা অবশ্য এই মহাতারকা দিয়ে রেখেছেন মেজর লিগ সকারে এবারের মৌসুমে; ইন্টার মায়ামির হয়ে ১২ ম্যাচে ১২ গোল করে।
মন্তব্য করুন: