প্রকাশিত:
১৩ জুন ২০২৪, ১২:৪৮
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাজনীতিবিদরা চীনের বৈদ্যুতিক গাড়িকে নিজেদের অটোমোবাইল শিল্পের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন। আর তাতে ইউরোপের বাজারে বেড়ে যেতে পারে চীনা গাড়ির দাম।
ইইউ ‘আপাতত’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কার্যকর সমাধান না হলে ৪ জুলাই থেকে চীনা উৎপাদনকারীদের শুল্ক বাবদ বাড়তি অর্থ গুনতে হবে।
গত অক্টোবরে শুরু হওয়া ইউরোপিয়ান কমিশনের তদন্তে যারা সহযোগিতা করছে, তাদের জন্য শুল্ক হার হবে ২১ শতাংশ। আর যারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়নি, তাদের জন্য শুল্ক হার ৩৮.১ শতাংশ।
ইতোমধ্যে তিন কোম্পানির জন্য সুনির্দিষ্ট শুল্ক হার ঠিক করা হয়েছে:
বিওয়াইডি: ১৭.৪%
গিলি: ২০%
এসএআইসি: ৩৮.১%
বিবিসি লিখেছে, চীনের সরকারি প্রণোদনা সুবিধা পাওয়া গাড়ি পানির দরে ইউরোপের বাজারে বিক্রি হচ্ছে- এমন অভিযোগে তদন্ত চলার মধ্যেই ইইউ এ ঘোষণা দিল।
এই তদন্তকে ‘সুরক্ষাবাদী’ আখ্যা দিয়ে চীন বলছে, নতুন করে শুল্ক আরোপ করা হলে তা হবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতির লঙ্ঘন।
নতুন মাশুল কার্যকর হলে চীনে ইলেক্ট্রিক গাড়ি উৎপাদনকারী বিদেশি কোম্পানিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যার মধ্যে ইউরোপের বিএমডব্লিউও আছে।
ইউরোপীয় কমিশন বলেছে, টেসলার আবেদনের ভিত্তিতে কোম্পানিটির জন্য আলাদা শুল্ক হার ঠিক করা হতে পারে।
চীনে উৎপাদন করা সব ইলেক্ট্রিক গাড়িতে বর্তমানে যে ১০ শতাংশ শুল্ক আছে, নতুন হার তার চাইতে বেশি হবে।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা ইলেক্ট্রিক গাড়িতে ২৫ থেকে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর ইইউ শুল্ক বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিল।
কেবল চীনই এ পদক্ষেপের সমালোচনা করছে না, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাজনীতিবিদ এবং এ খাত সংশ্লিষ্ট কয়েকজনও মুখ খুলেছেন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইন জিয়ান বলেছেন, তাদের ভর্তুকির বিপরীতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হলে সেটা হবে সুরক্ষাবাদেরই নামান্তর।
তিনি বলেছেন, নতুন শুল্ক আরোপের কারণে চীন-ইইউ অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সহযোগিতা সম্পর্ক হুমকির মুখে পড়তে পারে। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক অটোমোবাইল উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থাও ঝুঁকিতে পড়বে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৫টি দেশ, যাদের জনসংখ্যা এই অঞ্চলের ৬৫ শতাংশ-তারা এই পদক্ষেপের বিপক্ষে ভোট না দিলে আগামী নভেম্বর থেকে নতুন শুল্ক হার কার্যকর হবে।
এই পদক্ষেপে বেইজিংয়ের সঙ্গে ‘বাণিজ্য যুদ্ধের’ ঝুঁকি দেখছেন জার্মানির পরিবহনমন্ত্রী ভলকার উইচিং।
তিনি এক্স পোস্টে লিখেছেন, “ইউরোপিয়ান কমিশনের শাস্তিমূলক শুল্কারোপে জার্মানির কোম্পানি ও তাদের শীর্ষ পণ্যগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
ইউরোপিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ইউরোপের গাড়ি শিল্পে প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে ‘অবাধ ও মুক্ত বাণিজ্য’ জরুরি।
তারা বলছে, ইলেক্ট্রিক গাড়ির চল বাড়ানোর জন্য যখন পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তখন এধরনের পদক্ষেপ বিভ্রান্তিকর।
অবাধ বাণিজ্যের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে মার্সিডিজ-বেনজ অ্যান্ড স্টেল্যান্টাস।
স্টেল্যান্টাস বলেছে, তারা এমন পদক্ষেপকে সমর্থন করে না যেটি বিশ্ব বাণিজ্যকে বিভক্ত করে।
ইউরোপের কিছু গাড়ি কোম্পানি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে তাল মেলাতে আঞ্চলিক শিল্পনীতির দাবি তুলেছে।
গত বছর কেবল চীনে ৮০ লাখ ইলেক্ট্রিক গাড়ি বিক্রি হয়েছে, যা বিশ্বে বিক্রি হওয়া এমন মোট গাড়ির ৬০ শতাংশ।
মন্তব্য করুন: