বুধবার, ১২ই মার্চ ২০২৫, ২৮শে ফাল্গুন ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল dailyvobnews@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • শেখ হাসিনা-জয়-রেহানার ১২৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ
  • দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়তে হবে
  • আইনশৃঙ্খলার অবনতি যারা ঘটাচ্ছে, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না
  • ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত, ৯০ দিনে ধর্ষণের বিচার করতে হবে
  • পতিত স্বৈরাচার নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছে
  • ঈদযাত্রায় নৌপথে অতিরিক্ত ভাড়া ও যাত্রীবহন করলে কঠোর ব্যবস্থা
  • প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ
  • হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য ও সকল সহযোগীর বিচার হবে
  • ইসির অধীনে এনআইডি সেবা না রাখার প্রস্তাব
  • আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্ন, যে জবাব দিলেন ড. ইউনূস

বাবর আলীর অভিজ্ঞতা:

এভারেস্ট চূড়া থেকে নামার সময় আড়াই ঘণ্টা তুষারঝড়ে

ডেস্ক রির্পোট

প্রকাশিত:
১ জুন ২০২৪, ১২:২৯

১৯ মে ষষ্ঠতম বাংলাদেশি হিসেবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করলেন বাবর আলী। এর দুই দিন পরই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি জয় করেন চতুর্থ সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ লোৎসে। দুই শীর্ষ ছোঁয়ার এই অভিযানের পরতে পরতে ছিল বিপদ আর মৃত্যুঝুঁকি। দেশে ফিরে এই অভিজ্ঞতা লিখলেন বাবর আলী

চোখেমুখে বাতাস আর তুষারের যুগপৎ ঝাপটা। গুঁড়া গুঁড়া তুষারে সাদা হয়ে উঠছে পোলারাইজড চশমার কালো কাচ। চশমার ফাঁকফোকর গলে চোখে আঘাত হানতে চাইছে তুষারকণা। এভারেস্টের ব্যালকনির কিছুটা ওপরে আছি আমরা। নেপালের স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ২০ মিনিটে পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থান ছুঁয়ে নামতে শুরু করেছি। এক ভারতীয় ক্লাইম্বারের অসাড় আঙুলে র‍্যাপেল (দড়ির সাহায্যে নিচে নামা) করতে অসুবিধা হচ্ছিল দেখে তাঁকে সাহায্য করতে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এরপরই শুরু হয় ঝড়। প্রতিক্ষণে বাড়ছে ঝড়ের তীব্রতা। জলদি কোনো আড়াল খুঁজে নিতে বলছে মস্তিষ্ক। কিন্তু এই গিরিশিরায় আশ্রয় নেওয়ার মতো তেমন কোনো পাথরের আড়াল কই!

ব্যালকনির ওপরে একটি উন্মুক্ত গিরিশিরায় আমরা আছি। পর্বতে তুষারঝড় মোকাবিলার জন্য এটাকে বলা যায় সবচেয়ে নাজুক অবস্থান। বারবার শুধু মনে হচ্ছে—এই বুঝি অবাঞ্ছিত বস্তু মনে করে পাহাড়ের গা থেকে আমাদের উপড়ে ফেলে দেয় হিমালয়ের বাতাস। অসহায়ের মতো প্রকৃতির এই রুদ্ররোষের কাছে নিজেদের সমর্পণ করে বসে আছি। ঘাড় গুঁজে ঝড় থামার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।

বাতাসের তীব্রতা বাড়ে, পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে উড়ো তুষারকণা; আর মনের কোণে জমতে থাকে শঙ্কা। অক্ষত ফিরতে পারব তো? আরোহণের সময় দেখা মঙ্গোলীয় পর্বতারোহীর মতো পরিণতি হবে না তো! শক্তি-সামর্থ্যে কোনো অংশেই কম ছিলেন না ওই মঙ্গোলীয়। কিন্তু প্রতিকূল প্রকৃতির সঙ্গে যুঝে এমন সাধ্য কার! মাত্র চার দিন আগেই এই পাতলা বাতাসের রাজ্যে তাঁর শেষ তপ্ত নিশ্বাস ফেলেছেন। নাকি তুষারক্ষতে হাত-পায়ের ডগা হারাতে হবে? পাশে বসে সেই আশঙ্কাই করছিলেন শেরপা বন্ধু বীরবাহাদুর তামাং। আর কিছুক্ষণ এই ঝড় চললে সঙ্গের সরঞ্জামগুলোর উপযোগিতাও হুমকির মুখে পড়বে।

হাতের আঙুলগুলো অসাড় হতে শুরু করেছে। পর্বতে চলতে থাকলে হৃৎপিণ্ড থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থিত হাত আর পায়ের ডগাগুলোও সচল থাকে। নিশ্চল বসে থাকলেই মুশকিল। অবশেষে দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা পর অকস্মাৎ থামল তুষারঝড়। আমরাও হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।

ব্যালকনি থেকে পরের পথটুকু কঠিন পরীক্ষাই নিল। পা ফেললেই নরম তুষারে হাঁটু অবধি ডুবে যাচ্ছিল। শীর্ষের দিকে চলার সময়ে মনে হচ্ছিল— উড়ে যাচ্ছি পাখির মতো। আর এখন চলতে হচ্ছে কেঁচোর মতো। তবে সাড় ফিরতে শুরু করেছে হাতের আঙুলে। নামার জন্য ব্যবহৃত ঠান্ডা দড়িতে হাতের তালুর উষ্ণতা টের পাচ্ছি। ক্লান্ত পা, শ্রান্ত ফুসফুস দুটি কিংবা উতরাই পথে সামনের দিকে ঝুঁকে থাকা শরীর—নামার সময় দুর্ঘটনায় পড়ার জন্য এর যেকোনোটাই হতে পারে দায়ী। তাই অতি সাবধানে ফেলছি পা। এভারেস্টচূড়া থেকে নিচের নিরাপদ আশ্রয় মাত্র ৯০০ মিটার। মাথা গোঁজার মতো ঠাঁই আর গলায় উপুড় করার মতো পানি—এই দুটি জিনিসই শুধু চোখে ভাসছে। পর্বতে তো আর কিছু চাওয়া নেই। ‘মিনিমালিস্ট’ হওয়ার শিক্ষা প্রতিবার পর্বত থেকেই যে নিয়ে যাই।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর