প্রকাশিত:
২৩ মে ২০২৪, ১৩:৩৬
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল ইসলাম। সে কলাগাছের তন্তু বিশেষায়িত করে প্লাস্টিক, কার্বন ও সিলিকন পণ্যের বিকল্প ব্যবহারযোগ্য পরিবেশবান্ধব টাইলস ও টিন তৈরির ফর্মুলা আবিষ্কার করেছে। একই সঙ্গে পচা বা অব্যবহৃত সবজির শ্বেতসার থেকে বানিয়েছে পচনযোগ্য পলিথিন। তার এসব পণ্য পরিবেশবান্ধব ও অনেকটা সাশ্রয়ী।
সাজ্জাদুলের বাবা একজন দরিদ্র কৃষক। তার বাড়ি শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের মহাজেরাবাদ গ্রামে। সে জানায়, শুধু টাইলস নয়, তার আবিষ্কৃত কাঁচামাল দিয়ে প্লাস্টিক, কার্বন ও সিলিকনে তৈরি প্লাস্টিকের আসবাব, টিন, টাইলস ও কার্বনের তৈরি মোটরযানের যন্ত্রাংশের বিকল্প হিসেবে কলাগাছের তন্তু ব্যবহার করা সম্ভব। এমনকি বুলেট প্রুফ দরজা-জানালাও তৈরি হবে। এই কাঁচামালে ৬৫ শতাংশ কলাগাছের তন্তু ও ৩৫ শতাংশ রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার হয়েছে।
জানা গেল, তার উদ্ভাবিত প্লাস্টিক পণ্য উচ্চ তাপে গলিয়ে সহজেই রাসায়নিক দ্রব্য ও কলাগাছের তন্তু আলাদা করা যায়। আর সবজির শ্বেতসার থেকে তৈরি পলিথিন মাটিতে এক মাসে ও পানিতে তিন মাসে পচে যাবে, যা মাটির জন্য হবে জৈব সার ও পানিতে হবে মাছের খাবার।
কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক হৃদয় কুমার ভৌমিক জানান, সাজ্জাদুল কলাগাছের সেলুলোজ সমৃদ্ধ তন্তুর হাইডো অক্সাইড ও রেজিন ব্যবহার করে টাইলস ও আলুর শ্বেতসার থেকে পলিথিন তৈরি করে দেখিয়েছে। কলেজের ল্যাবে তা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও দেখেছেন। আরও অধিক গবেষণায় ভালো ফল আসতে পারে।
উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক রোমান মিয়া বলেন, প্রধান কাঁচামাল কলাগাছের তন্তু সহজলভ্য। তাই এটির ব্যবহারে গ্লাস ফাইবার ও কার্বন ফাইবারের প্রয়োগ কমবে। সাজ্জাদুলের উদ্ভাবিত পলিথিন পরিবেশের ওপর অপচনশীল পলিথিনের প্রভাব কমাবে।
সাজ্জাদুলের উদ্ভাবিত টাইলসের ওজন পায় ৩০০ গ্রাম। এর মধ্যে রয়েছে ২০০ গ্রাম কলাগাছের তন্তু ও হাইড্রো অক্সাইড ৬০ গ্রাম এবং রেজিন ৪০ গ্রাম। দীর্ঘ সময় ধরে পণ্যটি যেন না পচে এ জন্য রেজিন ব্যবহার হয়। হাইড্রো অক্সাইড রেজিনের অবস্থানকে আরও শক্তি দেয়। আর পরিবেশবান্ধব পলিথিনের জন্য ব্যবহার হয় বাজারের পরিত্যক্ত সবজি থেকে সংগ্রহ করা শ্বেতসার, অ্যাসিটিক এসিড ও গ্লিসারল।
সাজ্জাদুলের দাবি, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ফল ও সবজি অপচয় হয়। এই অপচয় করা শস্য থেকে পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরি করা হলে দেশের অর্থনীতিতে আসতে পারে বড় পরিবর্তন। পাশাপাশি কমে আসবে পরিবেশ দূষণ।
মন্তব্য করুন: