প্রকাশিত:
১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১৩:০৭
বরগুনা সদরের একটি মাদরাসা এমপিওভুক্ত হলেও কয়েকজন শিক্ষকের বিল আটকা ছিল। প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল মো. আব্দুস সালাম অনেক চেষ্টা-তদবির করেন শিক্ষকদের বিল করানোর জন্য। এই সুযোগে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপসচিব ও প্রগ্রাম অফিসার পরিচয়ে দেওয়া দুজন।
ওই দুজন প্রিন্সিপালের কাছ থেকে কয়েক দফায় ২০২১ সালে ১৪ লাখ টাকা নিলেও বিল হয়নি।
এক পর্যায়ে তাঁরা ফোনের সিমও বদলে ফেলেন। এতে সন্দেহ হলে খোঁজখবর নেন প্রিন্সিপাল আব্দুস সালাম। জানতে পারেন, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে উপসচিব ও প্রগ্রাম অফিসার পদে জুবায়ের বা আসাদুজ্জামান মানিক এবং আব্দুল গফফার বা সুমন চৌধুরী নামে কেউ নেই।
শুধু প্রিন্সিপাল আব্দুস সালামই নন, সারা দেশে এমন অন্তত দুই ডজন শিক্ষককে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে চার কোটি টাকার বেশি।
কেউই টাকা ফেরত পাননি। প্রতারণার শিকারদের একজন বাদী হয়ে ২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর বংশাল থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করছিল পিবিআই।
তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য ও প্রতারিতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জুবায়ের ওরফে মো. আসাদুজ্জামান মানিক ওরফে লুৎফর রহমানকে (৪৭) গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত ২টার দিকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানার ফলগাছা গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্য সহযোগী আব্দুল গফফার ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে সাইফুলকে (৭৭) রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) একটি দল। রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আগারগাঁওয়ে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত ডিআইজি মো. জাহাঙ্গীর আলম।
পিবিআই বলছে, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপসচিব, প্রগ্রাম অফিসার, কখনো সিস্টেম অ্যানালিস্টের পরিচয়ে মাদরাসার শিক্ষকদের টার্গেট করেন তাঁরা। এরপর এমপিওভুক্তি ও নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত লাইব্রেরিয়ানদের বেতন-ভাতাদি নিয়মিত করে দেওয়ার আশ্বাসে চার কোটির বেশি ঢাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নেন তাঁরা।
জাহাঙ্গীর বলেন, এমপিওভুক্তি বাতিল করার ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং এমপিওভুক্তি বহাল রাখা, আবার কোনো মাদরাসার নবনিযুক্ত লাইব্রেরিয়ানদের বেতন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শাখা থেকে নিয়মিত করে দেওয়ার কথা বলে সংশ্লিষ্ট মাদরাসার অধ্যক্ষ ও সুপারদের আসাদুজ্জামান মানিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ঢাকায় ডাকা হয়।
এরপর ২০২১ সালের ২ আগস্ট উল্লিখিত মাদরাসার অধ্যক্ষ ও সুপাররা বিশ্বাস করে সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশ সচিবালয়ের বিপরীতে ওসমানী মিলনায়তনের সামনে দেখা করেন জোবায়ের রহমানের সঙ্গে, যিনি নিজেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শাখার প্রগ্রাম অফিসার পরিচয় দেন। সেখান থেকে মামলার বাদী ভোলা চরফ্যাশনের কুচিয়ামোড়া ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল কামরুজ্জামানসহ অন্য মাদরাসার অধ্যক্ষ ও সুপাররা বংশাল থানাধীন রায়সাহেব বাজারে যান।
সেখানে ১২ লাখ টাকা চান জোবায়ের। সেদিন নগদ দেওয়া হয় ছয় লাখ ৯০ হাজার টাকা। চারটি মোবাইল নম্বরে নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে বাকি চার লাখ ৬১ হাজার ১০০ টাকা পাঠান শিক্ষকরা।
অতিরিক্ত ডিআইজি জানান, টাকা দিয়েও কাজ না হওয়া, সব মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং নিয়োগপ্রাপ্ত লাইব্রিয়ানদের বেতনের অগ্রগতি না দেখতে পেয়ে সবাই খোঁজ নিতে থাকেন। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে খোঁজখবর নিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, জুবায়ের ওরফে আসাদুজ্জামান মানিক নামে কোনো প্রগ্রাম অফিসার কর্মরত নেই।
জাহাঙ্গীর বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষকরা নিরুপায় হয়ে একরকম রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিলেন। না টাকা ফেরত পাচ্ছিলেন, না পান বেতন-ভাতা। পিবিআই মামলাটি তদন্তের ভার নিয়ে দুই মাসের মধ্যেই মূল দুই প্রতারককে গ্রেপ্তার করে। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে উপস্থাপন করলে আদালত আসামিদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তার এখানে যোগসাজশ রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সে রকম কোনো তথ্য পাইনি।’
মন্তব্য করুন: