বৃহঃস্পতিবার, ৯ই জানুয়ারী ২০২৫, ২৫শে পৌষ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল dailyvobnews@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • টিসিবির পণ্য মিলবে স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডে
  • ১৫২ কর্মকর্তাকে বেতনের টাকা ফেরত দিতে বলল ইসি
  • শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  • আগামী নির্বাচনে ভিন্নরূপে দেখা যাবে আনসার-ভিডিপিকে
  • প্রবাসীদের এনআইডির সার্ভিস চার্জ পর্যালোচনা করবে ইসি
  • নতুন ভোটার ১৮ লাখ ৩৩ হাজার, মোট ১২ কোটি ৩৬ লাখের বেশি
  • বছরের প্রথম দিনে ঢাকার বাতাস ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’
  • অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২ কর্মকর্তা
  • থার্টি ফার্স্টে আতশবাজি ফোটানো বন্ধ চেয়ে হাইকোর্টে রিট
  • প্রস্তুত হচ্ছে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল

ক্যান্সার রোগী ১০ গুণ বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত:
২৫ জানুয়ারী ২০২৪, ১২:৪৯

জীবনযাপনের ধরন, খাদ্যাভ্যাস ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। দেশে ক্যান্সারের রোগীর সঠিক হিসাব না থাকলেও বিশেষজ্ঞদের ধারণা, গত চার দশকে এই রোগে আক্রান্তের হার ১০ গুণ ছাড়িয়ে গেছে। সে তুলনায় চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতি হয়নি।

ক্যান্সার রোগী ১০ গুণ বেড়েছেএমন পরিস্থিতিতে ক্যান্সার দ্রুত শনাক্তসহ চিকিৎসাব্যবস্থা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের কার্যালয়ে মেডিক্যাল অনকোলজি সোসাইটি ইন বাংলাদেশের (এমওএসবি) আয়োজনে এবং ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের সৌজন্যে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। বিশ্ব ক্যান্সার দিবস উপলক্ষে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে রেজিস্ট্রির ব্যাপারটা দুর্বল। বাংলাদেশে বর্তমানে মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট (ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ) আছেন মাত্র ৩০ জন।

মেডিক্যাল, রেডিয়েশন, গাইনি, সার্ভিক্যাল, হেমাটো অনকোলজিস্টসহ সব ধরনের অনকোলজিস্ট মিলে ৩০০-এর বেশি হবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতি এক লাখে একজন বিশেষজ্ঞ থাকতে হবে। সে হিসাবে আমাদের অন্তত এক হাজার ৭০০ অনকোলজিস্ট থাকা উচিত, সেখানে আছেন মাত্র ৩০০ জন। সুতরাং বিশেষজ্ঞ, নার্স, টেকনোলজিস্ট, সব ধরনের সেবাদাতাসহ জনবল বাড়ানো আমাদের এক নম্বর কাজ।


’ প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ যে উনি আট বিভাগে আটটি মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে প্রায় তিন হাজার ৪০০ শয্যা তৈরি করবেন। প্রথমে ক্যান্সারের জন্য ১৮২ শয্যা তৈরি করবেন। ক্যান্সার, কিডনি ও হার্টের জন্য তিনটি করে হাসপাতাল করবেন। এতে সাধারণ মানুষের ঢাকায় আসার প্রবণতা কমবে। আরেকটি বিষয় হলো, ‘আমাদের অসচেতনতা আছে।

কী করতে হবে বা কোথায় যেতে হবে, তা আমরা জানি না। যেমন—যে চিকিৎসা গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় সম্ভব, তার জন্য যেন ঢাকা শহরে আসতে না হয়। তৃতীয়ত, আমাদের ক্যান্সার স্ক্রিনিং বা প্রাথমিক শনাক্তকরণ কম। এটা বাড়াতে হবে। আমাদের দেশে ক্যান্সার রোগী কতজন আছে, আমরা তা বলতে পারি না। পাশের দেশের হিসাব দিয়ে আমরা আনুমানিক হিসাব দিই আমাদের এখানকার। সুতরাং আমরা যাতে যথাযথভাবে বলতে পারি আমাদের ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা কত, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে।’

এমওএসবি সভাপতি অধ্যাপক ডা. পারভীন শাহিদা আখতার বলেন, ‘আশির দশকের তুলনায় বর্তমানে ক্যান্সার রোগী ১০ গুণ বেড়ে গেছে। তবে এখনো ক্যান্সার রেজিস্ট্রি করা যায়নি। আশার কথা হলো, বিএসএমএমইউয়ের অধীনে ক্যান্সার রেজিস্ট্রি হতে যাচ্ছে। আমাদের ৮০ শতাংশ ক্যান্সার রোগী হাসপাতালে আসে তৃতীয় বা চতুর্থ পর্যায়ে এসে। এসব রোগী তিন-চার ধরনের উপসর্গ নিয়ে আসে।’

তিনি বলেন, ‘শরীরে যেকোনো বয়সে ক্যান্সার হতে পারে। দেশে ক্যান্সার আক্রান্তদের ৫ শতাংশ শিশু। ৩০ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ৩৯ বছর। তাদের মধ্যে আবার ৪০ শতাংশের দীর্ঘমেয়াদি রোগ কোমরবিডিটি সমস্যা রয়েছে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে কোমরবিডিটি ৭০ থেকে ৮০ শতাংশের রয়েছে। নারীদের মধ্যে বেশির ভাগের জরায়ু ক্যান্সার। এখন আবার ফুসফুসের ক্যান্সার বেশি হচ্ছে। যদিও ফুসফুসের ক্যান্সার পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি।

বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্যান্সার দিন দিন বাড়ছে এবং বাড়তে থাকবে বলেই আমার আশঙ্কা। আমরা চাই আর না চাই, কিছু মানুষের ক্যান্সার হবেই।’ এমন পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় হলো, ক্যান্সার প্রতিরোধক ব্যবস্থা করা, দ্রুত শনাক্ত ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে অনকোলজি বা ক্যান্সার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিশেষজ্ঞ তৈরি করা।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. নাজির উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘দেশে ক্যান্সার চিকিৎসার অবস্থা শোচনীয়। রেডিয়েশন থেরাপির জন্য মেশিন দরকার ৩০০, সেখানে ছয়-সাতটি মেশিন চালু আছে।’

গোলটেবিল বৈঠকে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অনকোলজি সোসাটির সাধারণ সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। এর মধ্যে জাতীয়ভাবে ক্যান্সার রেজিস্ট্রি চালু, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধের মূল সহজলভ্য করা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি অনকোলজি ফ্যাকাল্টি প্রতিষ্ঠা করা। যার অধীনে বিভিন্ন ক্যান্সার বিভাগ তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। রেডিয়েশন অনকোলজি, সার্জিক্যাল অনকোলজি, গাইনি অনকোলজিসহ অন্যান্য অনকোলজি কোর্স চালু করা। এমবিবিএস কোর্সে ক্যান্সার বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা।

গাইনি অনকোলজিক্যাল সোসাইটি ইন বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সাবেরা খাতুন বলেন, ‘জরায়ু ক্যান্সার শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ না হলেও ৯৮ শতাংশ জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে চাই।’

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (মেডিক্যাল অনকোলজি) ডা. মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান বিদ্যুৎ বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী প্রচলিত আছে, ক্যান্সারের ৩ শতাংশের মধ্যে ১ শতাংশ রোগীকে চিকিৎসায় ভালো করা যায়, ১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং ১ শতাংশ প্রতিরোধ করা যায়। এই প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসায় সচেতনতা তৈরিতে আমাদের গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। প্রতিরোধের জন্য আমাদের জানতে হবে ক্যান্সার কেন হয়। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। এখানে গণমাধ্যমকে বড় ভূমিকা রাখতে হবে।’

ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিডেটের নির্বাহী পরিচালক (বিক্রয়) আশরাফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে ইনসুলিন এবং অন্যান্য জৈবিক পণ্য চালু করে ইনসেপ্টা বায়োটেক পণ্যের যুগ শুরু করে। সাশ্রয়ী মূল্যে অনেক জীবন রক্ষাকারী জৈবিক পণ্য উৎপাদন করে এবং এই পণ্যগুলো দেশের সাধারণ জনগণের কাছে আরো সহজলভ্য করেছে।

গোলটেবিল বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিতি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক (পুূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প) ডা. এস এম মাসুদ আলম, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএ) অনারারি সেক্রেটারি ডা. আবুল বাশার মো. জামাল, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের মেডিক্যাল অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. নাজরীনা খাতুন, রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও প্রধান ডা. রকিব উদ্দিন আহমেদ, মেডিক্যাল অনকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফেরদৌস আরা বেগম, মেডিক্যাল অফিসার ডা. এ টি এম কামরুল হাসান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিক্যাল অনকোলজি সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. রাসেল, বাংলাদেশ আমর্ড ফোর্সেস ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ডাইরেক্টরেট জেনারেল মেডিক্যাল সার্ভিসেস, কনসালট্যান্ট ফিজিশিয়ান জেনারেল মেজর জেনারেল ডা. মো. আজিজুল ইসলাম, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) ক্যান্সার সেন্টারের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (এলপিআর) মো. কুদর-ই- ইলাহী প্রমুখ।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর