সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ই পৌষ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল dailyvobnews@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • দেশকে কোনও দলের কাছে ইজারা দেয়া হয়নি
  • সাগরে নিম্নচাপ, দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি শুরু
  • ড. ইউনূস আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দেবেন আজ
  • ২৬ শতাংশ রেমিট্যান্স বেড়েছে হাসিনার পতনের পর
  • পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা প্রশ্নে রায় ঘোষণা চলছে
  • ৬ কমিশনের প্রধানদের নিয়ে হবে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’
  • নৌবাহিনীর ৩২ কর্মকর্তা পেলেন অনারারী কমিশন
  • ১০ এসি বাস নিয়ে চালু হলো বিআরটি প্রকল্প
  • একাত্তরের পুনরাবৃত্তি আমরা জুলাইয়ে দেখেছি
  • বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জনতার ঢল, ফুলেল শ্রদ্ধায় শহীদদের স্মরণ

গল্প

ঠিকানা

সজীব

প্রকাশিত:
৬ জানুয়ারী ২০২৪, ১৩:৩৬

-- তোমাকে না বলেছি , বারবার এত ফোন করে বিরক্ত করবে না ? (আমি)
-- জানো সজীব ? যে সুখের জন্য তোমাকে ছেড়ে অন্য মানুষের সাথে আসলাম সেই সুখ টা আমি পাইনি । প্রতিদিন চোখের পানি দিয়ে বালিশ ভিজিয়ে একা একা ঘুমিয়ে পরি । আমি তোমাকে কত কষ্ট দিয়েছি কিন্তু তুমি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করোনি কখনো । নীরবে একা একা কেদেছো তুমি কিন্তু সত্যি সত্যি আমি ভালো নেই সজীব ৷ ( বৃষ্টি )
-- বারবার একই কথা শুনতে ভালো লাগে না বৃষ্টি , তুমি স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করো । তোমার স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে থাকো সেই দোয়া রইল । (আমি)
-- আমাকে ক্ষমা করবে না ?
-- করছি তো ।
-- তাহলে আমার এত কষ্ট কেন ?
-- জানিনা ৷
-- একটা অনুরোধ করবো ?
-- হুম ।
-- তুমি একটা বিয়ে করো ।
-- কেন কেন কেন ?
-- এভাবে তুমি একা একা জীবন পার করো যেটা আমার কষ্ট আরো বাড়িয়ে দেয় ।
-- আমি তোমার কে ?
-- এখন কেউ না , কিন্তু এক সময় আমি আমার সন্তানের পিতা মনে করতাম তোমাকে । কিন্তু আমার নিজের জন্য আজকে আমাদের দুজনের জীবন টা বেদনা ।
-- আমি আমার ভালবাসার স্মৃতি নিয়ে কাটিয়ে দেব সমস্যা নেই । আমি জানি তুমি শুধু তোমার ঐ শরীর টা নিয়ে গেছো কিন্তু আমার নাজমা আক্তার বৃষ্টির ভালবাসা নিতে পারোনি ।
-- সজীব.....?
-- রাখলাম তাহলে ।
-- আরেকটু কথা বলি ?
-- বলো ।
-- ডিনার করছো ?
-- হ্যা ।
-- এখন কোই তুমি ?
-- ট্রেনের মধ্যে । আচ্ছা তুমি ঘুমাবে না ?
-- স্বামী বাসায় আসে খুব কম , এই দেখো রাত দুটো বেজে গেছে কিন্তু আসেনি । একা একা কতটা কষ্ট নিয়ে থাকি তুমি বুঝতে পারবে না ।
-- হাহাহা হাহাহা হাহাহা হাহাহা হাহাহা তাই ?
-- হাসছো কেন ?
-- একা একা থাকার কষ্ট আমি যদি না বুঝতে পারি তবে আর কে বুঝবে ? আকাশের কোটি কোটি তারা দেখে তোমাকে ভালবাসি ৭ বছর হয়ে গেছে কোন দেখা নেই । প্রতিটি মুহূর্ত চোখের পানি দিয়ে বালিশ ভিজিয়ে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকি । কোই একটা রাতও তো তোমার কথা না ভেবে পার করতে পারি নাই । আজও অপেক্ষা করি তোমার জন্য কিন্তু এর শেষ হবে না কখনো সেটাও জানি । তবুও অপেক্ষা করতে ভালো লাগে ।
-- তোমার এই কথা গুলো শুনলে আমার আ*ত্মহ*ত্যা করতে ইচ্ছে করে । আমি কেন যে সেদিন তোমার কাছ থেকে চলে আসলাম ? আমি এখন রোজ স্বপ্ন দেখি সজীব । আমার মনে হয় হঠাৎ করে একদিন নতুন একটা সকাল দেখতে পাবো ৷ যে সকালের মৃদু বাতাস তোমার শরী*রের গ*ন্ধ নিয়ে আসবে আমার কাছে ।
-- আমি আর স্বপ্ন দেখছি না , আর স্বপ্ন পূরণ করা আমার ইচ্ছে নেই ।
-- কেন ?
-- স্বপ্ন মানুষের বেঁচে থাকার প্রেরণা , মানুষ যতদিন বাঁচবে এ-ই স্বপ্ন নিয়েই বাঁচবে , যতই তা অপূর্ণ থাকুক । সব স্বপ্ন যদি পূরণ হয় ,তাহলে , মানুষ কল্পনা ও বাস্তবতার মধ্যে কোন পার্থক্য খুঁজে পাবেনা ।
-- যদি জানতাম তোমার কষ্টের কারন হব আমি ।
তোমার এক ফোটা অস্রুর কারন হব আমি । তবে সত্যি বলছি কখনোই আসতাম না তোমার জীবনে
শুধু দুর থেকে ভালোবাসে যেতাম তোমায় ।
-- সমস্যা নেই বৃষ্টি , কষ্ট মানুষ কে পরিবর্তন করে কষ্ট মানুষ কে শক্তিশালি করে । আর প্রতিটি কষ্টের অভিজ্ঞতাই আমার জন্য নতুন শিক্ষা । কেউ জীবন থেকে চলে গেলে জীবন থেমে থাকে না কিন্তু তার রেখে যাওয়া স্নৃতি আর স্বপ্ন গুলো জীবন কে বিষন্ন করে তুলে । কখনো ভাবিনি চলে যাবে তুমি আমাকে এভাবে কাঁদিয়ে কখনো বুঝিনি ফিরে আসবেনা আর
আমার পৃথিবী রাঙিয়ে ।
-- আজ বুঝতে পারছি আমি কতটা ভুল করেছি ।
-- না বৃষ্টি , ভুলটা আমার ছিল কারণ স্বপ্নটা যে আমি একাই দেখে ছিলম ।
-- সজীব , জীবনের গতির কথা ভাবলে পা দুটোর গতিও থেমে রয় নিঃসঙ্গ এই পথে তখন আত্মবিশ্বাস টুকুই সঙ্গি হয় ।
-- তোমার শহরের কোথাও আমি নেইঅথচ আমার পুরো শহরটাই তুমি । তুমি আমার ব্যস্ততা আর আমি তোমার অবসর ।
-- ৭ বছর হয়ে গেল দেখা হয়না , একবার চট্টগ্রাম আসবে ?
-- কেন ?
-- আমার সাথে দেখা করতে ।
-- কি লাভ ?
-- আমি তোমাকে দু-চোখ ভরে দেখবো , আর তুমি আমার হাতের রান্না করা নুডলস খাবে ।
-- আমার সময় হবে না ।
-- আমার মুখ দেখতে চাওনা তাই না ?
-- হাহাহা হাহাহা হাহাহা ।
-- হাসছো কেন ?
-- বৃষ্টি ,আজও সকাল বেলা ঘুম ভেঙ্গে গেলে ফ্রেমে বাঁধানো তোমার ছবি টার দিকে তাকিয়ে দেখি । মোবাইলে ওয়ালপেপারে তোমার ছবি , বালিশের পাশে তোমার ছবি রেখে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরি এর শেষ কোথায় বলতে পারো ?
-- প্লিজ ...! সজীব ।
-- রাখলাম বায় ।
★★
অফিসের কাজের জন্য পাবনা গেছিলাম , সেখান থেকে রাতের ট্রেনে রওনা দিলাম খুলনার উদ্দেশ্যে । কুষ্টিয়ার পোড়াদহ স্টেশনে আসার পরে আমার পাশের সিটের মেয়েটা ট্রেনে উঠছিল ।
মেয়েটা ট্রেনে উঠে বসার একটু পরেই আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেল । তার নরম শরীরের স্পর্শে আমি বারবার শিহরিত হয়ে যাচ্ছি । পারফিউম আর ঘামের গন্ধ মিশ্রিত হয়ে আলাদা একটা গন্ধ পাচ্ছি । এই মুহূর্তে আমার কি করা উচিত বুঝতে পারছি না তবে যেমন আছে তেমন থাকুক , ক্ষতি কি ?
আমিও সিটের সাথে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর ভান করে বসে আছি । মেয়ে টা খুব পরম স্নেহের মহিমায় মহিমান্বিত হয়ে আমার ডান হাত জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে মনে হয় ।
আমি চোখ বন্ধ করে ছিলাম , কিন্তু পরক্ষনেই মেয়ে টা আমার ভাবনা ভুল প্রমাণ করে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো ;-
-- মনে হয় খুব বড় ধরনের ছ্যাঁকা খেয়েছেন তাই জনাব ? (মেয়ে)
-- আমি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি সে আগের মতো চোখ বন্ধ করে আছে । তাই আমি তার চোখ বন্ধ করা মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম ;- জ্বি , আপনার ধারণা সঠিক । (আমি)
-- খুব ভালবাসতেন তাকে তাই না ?
-- হ্যাঁ ।
-- সেজন্য ৭ বছর ধরে আজও তার জন্য অপেক্ষা করেন ?
-- আপনি এতক্ষণ ঘুমের অভিনয় করেছেন তাই না মেডাম ?
-- আমার নাম ( ফারিয়া সুলতানা ) ।
-- ওকে মিস ফারিয়া ।
-- না , ফারিয়া সুলতানা ।
-- ঠিক আছে ফারিয়া সুলতানা ।
-- হুম এবার বাধ্য ছেলের মতো আপনার প্রেমের গল্প টা আমাকে বলুন ।
-- কেন ?
-- বিচার করবো ।
-- কার বিচার ?
-- আপনাদের প্রেমের মধ্যে কার দোষ আর কার গুন ছিল সেটা যাচাই করবো । আর তাছাড়া সামান্য কৌতূহল ও বলতে পারেন ।
-- ওহহ আচ্ছা ।
-- বলবেন না ?
-- হ্যাঁ ।
-- হুম শুরু করেন ।
★★
ওর নাম ( নাজমা আক্তার বৃষ্টি )
আমি ছোটবেলা থেকে চট্টগ্রাম শহরে বড় হয়েছি সে খানেই মা-বাবা আর আমি থাকতাম । চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ পড়ার সময়ে আমি যখন তৃতীয় সেমিস্টারে পড়ি তখন প্রথম সেমিস্টারে সে ভর্তি হলো । তার গ্রামের বাড়ি ছিল ফেণী জেলার ছাগলনাইয়া থানার মধ্যে ।
তার সাথে পরিচয় টা খুব অদ্ভুত ভাবে হয়েছিল যেটা মনে পরলে এখনো মাঝে মাঝে হাসি । যোগাযোগ হবার পরে আমি সাত দিনের মধ্যে তাকে প্রেমের প্রপোজ করি কিন্তু সে রাজি হলো না । প্রায় তিন মাস অক্লান্ত পরিশ্রমের পরে সে আমার ভালবাসার ডাকে সাড়া দিলো ।
পলিটেকনিক জীবনের বাকি দিনগুলোতে দুজনেই পাশাপাশি কাটিয়ে দিলাম ৷ আমি যখন বের হলাম তখন তার আরো এক বছর বাকি ছিল । কারণ সে আমার চেয়ে একবছর পরে ভর্তি হইছে তাই বের হবে একবছর পরে ।
আমি বিএসসি করার জন্য ঢাকা শহরে চলে গেলাম আর আমার ভালবাসার গল্প টা পরে রইল চট্টগ্রাম শহরে ৷ কিন্তু প্রতি মাসে মাসে আমি ট্রেনে করে তার সাথে দেখা করতে চট্টগ্রাম যেতাম ।
এত ভালবাসার পরেও তাকে আমি ধরে রাখতে পারি নাই । আমি বের হবার ৬ মাসের মধ্যে সে একটা চট্টগ্রামের স্থানীয় ছেলের সঙ্গে প্রেম করা শুরু করে । ওর একটা বান্ধবী প্রথম আমাকে জানালো ।
আমি প্রথম প্রথম মনে করতাম হয়তো বৃষ্টির বান্ধবী বৃষ্টির ক্ষতি করার জন্য আমার সঙ্গে মিথ্যা কথা বলে কিন্তু আমি ভুল ছিলাম । বৃষ্টি কে যখন আগের মত কথা বলতে আর পেতাম না তখন একদিন তাকে আমি জিজ্ঞেস করি । বৃষ্টি সাথে সাথে নতুন রিলেশন এর কথা শিকার করছে ।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করছি আমার অপরাধ টা কি ?
সে বলে আমি নাকি তার যোগ্য না তাই সে আমার সাথে সারাজীবন একসাথে কাটাতে পারবে না ।
আমি জিজ্ঞেস করলাম তাহলে এতদিন প্রেম করার কারণ টা জানতে পারি ?
সে বলে , এতদিন পরে নাকি সে বুঝতে পারছে যে আমার সাথে থাকা যায় না ।
নতুন ছেলের সঙ্গে প্রেম শুরু করার পরে মাত্র তিন মাসের মধ্যে তারা বিয়ে করে । অবশ্য বিয়েতে যাবার জন্য দাওয়াত দিয়েছিল আমাকে ।
বিয়ের কিছু দিন আগে সে আমার ফেসবুকের মধ্যে মেসেঞ্জারে মেসেজ দিয়েছিল ।
★ তোমার সাথে আমি দীর্ঘ অনেক টা সময় প্রেম করে ভালবেসে কাটিয়ে দিলাম । কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তোমার চেয়ে এখন যার সাথে বিয়ে হবে সেই আমার জন্য যোগ্য । তাই নিজের সুখের জন্য আমি তার হাতটা ধরলাম আর কোন কারণ নেই । তবে তুমি আমাকে স্বার্থপর ভাবতে পারো আর সেটাই স্বাভাবিক কারণ আমি সুখী ৷ তুমিও অনেক ভালো একটা ছেলে তাই হয়তো আমার চেয়ে অনেক সুন্দর একটা মেয়ে পাবে জীবন সঙ্গী হিসেবে । তোমার ভবিষ্যত জীবনের জন্য আমার দোয়া রইল । যদি পারো ক্ষমা করে দিও । ★
কিন্তু বৃষ্টি মিথ্যা কথা বলেছিল কারণ , ৭ বছর হয়ে গেছে আজও কাউকে ভালবাসতে ইচ্ছে করলো না । আজও বৃষ্টি কে নিয়ে রোজ স্বপ্ন দেখি , রাতের আঁধারে কল্পনা করি , সকাল বেলা বৃষ্টি হয়তো আমার সামনে আসবে । দিনের বেলা কল্পনা করি , রাত হলেই বাসায় গিয়ে বৃষ্টি কে দেখতে পাবো ।
রাত শেষ হয়ে যায় , দিনের সূর্য পশ্চিমে চলে যায় কিন্তু আমার অপেক্ষা শেষ হয়না ।
৫২ বছর বয়সে বাবা হঠাৎ করে আবার বিয়ে করে , মা সেই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আ*ত্মহ*ত্যা করে । বাবা আমাকে বললেন , আমি যেন তার জন্মদাতার ঋণ পরিশোধ করি ৷ বাবার কাছে আর কিছু বললাম না তবে সেই থেকে আর তার সাথে দেখা করিনি । একা একা বাস্তবতা মেনে নিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছি নিজ জীবনের পথচলা ৷
কিছু দিন আগে খবর পেলাম বাবা নাকি খুব অসুস্থ আমাকে দেখতে চান । কিন্তু আমার দেখা করার ইচ্ছে করছে না তাই যাবনা বলে দিলাম । বাবা ফোন করে কান্নাকাটি করে কিন্তু আমার কানে সেই কান্না পৌঁছাতে পারে না ।
পরশু রাতে মা'কে স্বপ্নের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি । মা আমাকে বাবার কাছে যেতে বলে তার কারণ বাবা নাকি ওপারে মায়ের কাছে চলে যাবে । কিন্তু আমার সঙ্গে দেখা না করে মরেও শান্তি পাবে না । মা তার স্বামী কে ম*রার আগে কষ্ট দিতে চায় না তাই আমি বাবার কাছে যাবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম ।
★★
-- আর কিছু শুনতে চান ?
-- কি বলবো বুঝতে পারছি না ।
-- বোঝার দরকার নেই ।
-- আপনি চাকরি করেন কিসে ?
-- সিভিল এ একটা কোম্পানির চাকরি করি ।
-- খুলনা থাকেন ?
-- হ্যা , তবে বেশি দিন না , ৮ মাস হলো খুলনা শহরে আসছি । আচ্ছা আপনার বাসা কোথায় ?
-- বাগেরহাট জেলা ৷
-- কুষ্টিয়া কেন গেছিলেন ?
-- ভালবাসার টানে ।
-- মানে ?
-- আপনার মত আমার একটা গল্প আছে । কিন্তু আমিও আপনার মত এ জীবনে কোনদিন বিয়ে করবো না ৷ মা-বাবা বিয়ে দিতে চায় কিন্তু আমার ইচ্ছে নেই বলে বাড়ি যাইনা ।
-- তাহলে কার কাছে থাকেন ? আপনার স্বামীর কাছে থাকেন নিশ্চয়ই ?
-- হাহাহা হাহাহা হাহাহা আমার বিয়ে হয়নি ।
-- ওহহ আচ্ছা । আপনার গল্প টা শুনতে পারি ?
-- যদি বেঁচে থাকি , আর এ জীবনে আবারও দেখা হয়ে যায় তবে সেদিন বলবো । কিন্তু আমার মনে হয় সে দিন টা আর কোনদিন আসবে না ।
-- কেন ?
-- আমি ট্রেনে উঠার আগে ১৫ টা ঘুমের ঔষধ খেয়ে তারপর উঠেছি ।
-- আজব মানুষ আপনি । কেন খাইছেন ?
-- ঘুমের মধ্যে নিশ্চিন্তে ম*রবো বলে ।
-- কিন্তু কেন ?
-- বেঁচে থাকলে বলবো ।
★★
বাহিরে ভোর হয়ে গেছে , আকাশ পরিষ্কার হয়ে সূর্য কে নিমন্ত্রণ করার জন্য প্রস্তুত । মেয়েটি আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে নিঃশ্বাস নিচ্ছে কিনা সেটা বারবার পরীক্ষা করি ।
ট্রেনের গতি কমে আসছে , যশোরের নোয়াপাড়া স্টেশন ঘন্টা খানিক আগে পার হয়ে গেছে । তাহলে এটা মনে হয় দৌলতপুর স্টেশন । আমি নামতে চেয়েছিলাম খুলনা মেইন রেলস্টেশনে কিন্তু মেয়েটি যদি সত্যি সত্যি ঘুমের ঔষধ খেয়ে থাকে তবে তাকে হাসপাতালে নেয়া জরুরি ।
দৌলতপুর স্টেশনে দুটো মানুষের সাহায্য নিয়ে মেয়ে টাকে নিয়ে নেমে পরলাম । একটা মাহিন্দ্রা রিজার্ভ করে সরাসরি ( আদ্বদীন হাসপাতালে যাচ্ছি ) কারণ সেখানে আমার একটা পরিচিত ডাক্তার আছে ৷ আগে থেকে পরিচয় ছিল না , কিন্তু কিছুদিন আগে একটা রোগীকে র*ক্ত দিতে গেছিলাম । সেই থেকে তার সাথে আমার পরিচয় ।
হাসপাতালে পৌঁছে দ্রুত জরুরি বিভাগের ডাক্তার ডেকে মেয়েটাকে ভিতরে পাঠিয়ে আমি অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছি । হাসপাতালের ক্যাশে টাকা জমা দিয়ে অপেক্ষা করছি ।
প্রায় ৩০ মিনিট পরে জরুরি বিভাগের ডাক্তার এসে আমাকে বললেন ;-
-- আপনার স্ত্রী এখন বিপদ মুক্ত আছে , কিন্তু একটা বিষয় বুঝতে পারছি না । স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতেই পারে কিন্তু তাই বলে গর্ভ*বতী অবস্থায় পেটে সন্তান নিয়ে কেউ ঘুমের ঔষধ খায় ?
-- ডাক্তারের কথা শুনে চমকে উঠলাম , প্রথমত সে মেয়েটাকে আমার স্ত্রী মনে করেছে । দ্বিতীয়ত তো মেয়েটি বলেছে তার বিয়ে হয়নি তাহলে মেয়েটি গ*র্ভবতী মানে কি ? ডাক্তার কে বললাম ;- আপনি কি শিওর , যে সে গর্ভবতী ?
-- ডাক্তার বললো , ১০০% শিওর , কেন আপনারা জানেন না ?
-- আমি বললাম , না জানিনা আমি ।
-- মনে হয় আপনার স্ত্রী আপনাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছে ।
  চলবে... 
 

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর