প্রকাশিত:
২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮:০৩
বৈশ্বিক খাদ্য উৎপাদনের এক-তৃতীয়ংশই জলবায়ু সংকটে ঝুঁকির মুখে রয়েছে এবং একইভাবে খাদ্য ও কৃষিব্যবস্থা জলবায়ু পরিবর্তনে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। বন উজাড়, নগরায়ন, কৃষি জমিতে সারের ব্যবহারের ফলে বিশ্বে এক-পঞ্চমাংশেরও বেশি কার্বন নিঃসরণ হয়। বাংলাদেশ বিশ্বের সপ্তম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত যেটি আমাদের জন্য যথষ্টে উদ্বেগজনক। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিগত বছরগুলো থেকে বেশকিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
তাই খাদ্য ও কৃষিখাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে জাতীয় পরিকল্পনায় জলবায়ু ন্যায্যতার দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে 'জলবায়ু পরিবর্তন এবং টেকসই কৃষি ও স্থায়িত্বশীল খাদ্য ব্যবস্থাপনা: ২৮তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে গৃহীত দিক-নির্দেশনা ও বাংলাদেশের বাস্তবতা' শীর্ষক এক সেমিনারের এসব কথা বলেন বক্তারা।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান বিশষ্টি অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক গবেষণা পরিচালক ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. এম আসাদুজ্জামান।
এ ছাড়া এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ড. রেজাউল করিম, ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের পরিচালক ড. জাহাঙ্গীর আলম খান, খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী, চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম. জাকির হোসেন খান, সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের রিসার্চ ফেলো ড. আজরীন করিম।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য ও সঞ্চালনা করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সমন্বয়কারী ও ওয়েভ ফাউন্ডেশন এর সুশাসন, অধিকার ও ন্যায্যতা কর্মসূচির উপ-পরিচালক কানিজ ফাতেমা।
সভাপতির বক্তব্যে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে বাচঁতে আমাদের একা কাজ করলে হবে না, বিশ্বের সকলকে সাথে নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করে আমাদের কৃষি তথা অর্থনীতিকে স্থায়িত্বশীল করতে সরকারের সকল মন্ত্রণালয়কে সম্পৃক্ত করে পরিকল্পনা ও বাসত্মবায়ন করতে হবে।
কৃষি, শিল্প, পশু, মাছ উৎপাদনের সাথে বিশেষ করে পানি ও ভূমির সম্পৃক্ততা রয়েছে। উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে এর বিপণন কিভাবে হবে এবং সবার হাতে খাদ্য পৌঁছে দিতে হলে একটি লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করতে হবে।
ড. রেজাউল করিম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশের করণীয় বিষয়ে পরবর্তী ২ বছরের মধ্যে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ঠেকাতে বিশ্বব্যাপী কৃষির জন্য ফান্ড তৈরি করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে কতটুকু নিতে পারবে সেটা এখন বিবেচনার বিষয়।
ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষকের যে ক্ষতি হয়, সেক্ষেত্রে যদি আর্থিক সহায়তা না দেওয়া হয় তাহলে কৃষক আর কৃষিতে ফিরতে আগ্রহ পাবে না।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. এম আসাদুজ্জামান বলেন, কৃষিখাতের পাশাপাশি পোল্ট্রি, মত্স্যখাতেও জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন ইস্যু অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে আমাদের এখানে শিল্পভিত্তিক মৎস্য খাতের ব্যাপ্তি ঘটেছে। এসকল ক্ষেত্রে খাদ্য নিরাপত্তা এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার হিসেবে বহুল আলোচিত। আমাদের মাথাপিছু আয়, কর্মসংস্থান বাড়ার সাথে সাথে খাদ্যের পুষ্টি নিশ্চিতকরণের বিষয়টি জড়িত। খাদ্যপণ্য ও পশুপালন খাতে ঘাটতি তৈরি হওয়াতে পুষ্টিতেও ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আর এসকল ইস্যু জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
আলোচক হিসেবে বক্তব্যে মহসিন আলী বলেন, খাদ্য অধিকার আইন ইস্যুতে আমরা খাদ্য প্রাপ্তি, পিছিয়ে পড়া, পিছিয়ে রাখা মানুষ এবং খাদ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট পুষ্টি অধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, নিরাপদ খাদ্য, কৃষি, ভূমি, পানিসহ সংশ্লিষ্টি বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের এই নেটওয়ার্ক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে রাসায়নিক সারের ব্যবহার, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, পানিতে আর্সেনিকের আধিক্য, জমির উর্বরতা হ্রাস ইত্যাদির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরাই। খাদ্য নিরাপত্তা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে খাদ্য ও কৃষি ভর্তুকি বাড়াতে হবে। ন্যায্যমূল্যের ভ্রাম্যমাণ ট্রাক, দোকান বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাভাবিক মূল্যে খাদ্যের যোগান বাড়াতে হবে।
মন্তব্য করুন: